আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এক নতুন ও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একদিকে যেমন চলছে তীব্র বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জনই ছিলেন মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত নিরীহ মানুষ।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গাজা নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে। বাসিন্দাদের মতে, শুজাইয়া, জায়তুন ও সাবরা এলাকায় বোমাবর্ষণের মুখে বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উপকূলের দিকে পালাচ্ছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, কেবল জায়তুনের দক্ষিণাংশেই ১৫০০-এর বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে এখন আর কোনো ভবন দাঁড়িয়ে নেই।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার বৃহত্তম নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাকে তারা হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করছে। তবে এই অভিযানে ভয়াবহ প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে যুদ্ধের “একটি নতুন ও ভয়াবহ ধাপের সূচনা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজা নগরীতে সেনা অভিযান ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। এতে লাখো বেসামরিক মানুষ আরও গভীর বিপদে পড়বে।”
যুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি তীব্র হয়েছে মানবিক সংকট। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুই শিশুসহ আরও চারজন অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শুধু ক্ষুধা-সংক্রান্ত কারণেই ৩১৭ জনের মৃত্যু হলো, যার মধ্যে ১২১ জনই শিশু।
আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, “অত্যন্ত করুণ দৃশ্য চোখে পড়ছে। পরিবারগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচণ্ড গরমে স্যুপ রান্নার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রায়ই খালি হাতে ফিরছে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা “গুম হয়ে যাওয়া” ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষকে, এমনকি শিশুদেরও, খাবারের খোঁজে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যাওয়ার পর জোরপূর্বক গুম করা হচ্ছে, যা নির্যাতনের শামিল। খাবারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার এই প্রক্রিয়া এখনই বন্ধ করতে হবে।”
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, তবে তাদের পরিচয় কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে তা জানায়নি।