আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ‘জেন-জি আন্দোলন’ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দেশটির বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ।

দেশটির শীর্ষ গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জল কামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। কিন্তু সংঘর্ষ আরও তীব্র হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালায়।

সহিংসতার বিস্তার
স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনের ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে এক তরুণ বলেন, “পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। একটি গুলি আমার পাশ দিয়ে চলে গিয়ে আমার পেছনে দাঁড়ানো এক তরুণীর হাতে লাগে।”

কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের কর্মকর্তা শেখর খানাল রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ সদস্য।

রাজধানীর বাইরে পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতে দুজন নিহত হন। এছাড়া বিরাটনগর, ভরতপুর ও পোখরায়ও একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

কারফিউ ও সেনা মোতায়েন
সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সোমবার সন্ধ্যার পর জরুরি বৈঠক ডেকে সংসদ ভবন এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সেনা মোতায়েন করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।

কাঠমান্ডুর জেলা প্রশাসন রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে। সরকারি কার্যালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থাকা সিংহদরবার এলাকাতেও কারফিউ চলছে।

কেন ক্ষুব্ধ তরুণরা?
গত সপ্তাহে নেপাল সরকার ফেসবুকসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে। সরকারের দাবি—এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিবন্ধন করেনি, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ঘৃণা ছড়ানো, প্রতারণা ও ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছিল।

কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশে হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তরুণরা প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন: “দুর্নীতি বন্ধ কর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়”, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দাও”, “যুব সমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”

আয়োজকরা একে ‘জেন-জি আন্দোলন’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের দাবি—এটি তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা দুর্নীতি, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তৈরি হয়েছে।

দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট
বিরোধীদলগুলো সরকারের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছে। সাবেক অর্থসচিব রামেশ্বর খানাল বলেছেন, “কর্মসংস্থানের অভাব একটি সমস্যা হলেও মূল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি ও দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতার কারণে।”

বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা থাকলেও নেপালে এর সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সমালোচকরা।

 সূত্র: রয়টার্স, কাঠমান্ডু পোস্ট।