রক্ত দিন ভক্ত হব
হ্যালো ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ-হ্যালো মসকিউটোফোন টেস্টিং হ্যালো! প্রাণ প্রিয় মশক ভাই ও বোনেরা, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় সবাইকে স্বাগতম। এ দিবসে ম্যালা কাজ ফেলে শুধু আপনাদের উদ্দেশ্যে মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে উড়ে এসেছেন মশক জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। ওনারা শুধু বিজ্ঞই নন, অভিজ্ঞও বটে। সর্বপ্রথম বলবেন, মশক সমাজের কিউটের ডিব্বা, কিউট কিউলেক্স মশা।
আমি কিউলেক্স। কারও চোখে কিউট কিউলেক্স, কারও চোখে কিউট লেস। যাদের চোখে কিউট লেস, সেই মানব সম্প্রদায়কে কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই।
* আমরা তো ভালো না, কিন্তু আপনার চোখে ভালো কে?
* আপনার এই হাহুতাশ মার্কা নিরস জীবনে সবচেয়ে বেশি চুমু খেয়েছে কে?
* কে তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে শুধু ভালোবাসার টানে আপনার কাছে বারবার ছুটে এসেছে?
* কে সেই কণ্ঠশিল্পী, যে শুধু আপনাকে গান শোনানোর জন্য দাওয়াত কার্ড ছাড়াই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে?
* কে সেই পাগলু, যে এই করোনা মহামারির সময়েও কোনো রকম গ্রুপ টেস্ট ছাড়াই আপনার রক্ত তার নিজের শরীরে টেনে নেয়?
* কে সেই সুজন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও যে আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারে না?
* এত ভালোবাসা পাওয়ার পর সেই প্রেয়সীকে দেখলে কী করেন? মশার স্প্রে অথবা বৈদ্যুতিক ব্যাট কিংবা রক্তাক্ত হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে বলুন তো, এভাবেই বুঝি ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হয়?
অভিযোগ আর অভিমান রেখে আজকের মতো বিদায় নিলাম।
কিউলেক্স এর কিউট বক্তৃতার পর এবার যিনি বক্তব্য দেবেন তিনি ‘মানুষের যম-কথা কন কম’, মশা জগতের অহংকার এডিস মশা।
সংগ্রামী সাথীরা আমার, আমি এডিস। অভিযোগ, অভিমানে আমি বিশ্বাসী না। আমি বিশ্বাসী বিদ্রোহে। আমি বিশ্বাসী আন্দোলনে। আপনারা কী শুনেছেন সেসব দিনের কথা? একটা সময় মানুষ দুই হাত দিয়ে ঠাসঠাস করে আমাদের পিষে মারত। ওদের বাপ-দাদারা হাসতে হাসতে সেই নির্মম গল্প শোনাতো তাদের সন্তানদের। ওরা যেমন শোনাত, আমাদের বাপ, দাদারাও কী কাঁদতে কাঁদতে শোনায়নি সে গল্প? এখন সময় এসেছে প্রতিশোধ নেওয়ার। ভয়ংকর প্রতিশোধ। কামড় হবে, কিন্তু কোনো সাউন্ড হবে না।
জানি অনেকে ভয়ে আছেন। বেশি কামড়াকামড়ি করতে গেলে মানুষ যদি চিরুনি অভিযান চালায়? আরে ভাইরে, আমরা কি উকুন, যে চিরুনি অভিযানে বিনাশ হবো? মশা দূর হবে, মশক অভিযানে। যতদিন না মশক দূরীকরণে মশক অভিযান চালু না হচ্ছে ততদিন কোনো চিন্তা নাই। এমনকি মশক অভিযান চালু হলেও চিন্তার কিছু নেই। কামান দাগিয়ে, স্মোকগান দিয়েও আমাদের আর দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা এখন প্রবল বিক্রমশালী। ভয় দেখিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে আমাদের বশে রাখা সম্ভব না। আমরা ঘুস খাই না, ভেজাল খাই না, সয়াবিন তেলের নামে পাম অয়েলও খাই না যে ক্যান্সারে মরব। আমরা খাই খাঁটি রক্ত। তাই আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। সবাইকে রক্ত লাল সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
সবশেষে বক্তৃতা দিতে আসছেন এ সভার সভাপতি, মশক সমাজের গৌরব, ম্যালেরিয়া রোগের বাহক অ্যানোফিলিস ওরফে অ্যানা আপা।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি অ্যানোফিলিস। আমি জানি, আজ আপনাদের মন খারাপ। মশক জাতি আজ নির্দয় মানুষের থাপ্পরের কাছে জিম্মি। বড়ই ভয়ংকর এই মানবজাতি। সব প্রাণীকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। মশাকে তো আরও বেশি তুচ্ছ ভাবে। পুচ্ছ নাড়াতেই দেয় না। দেখলেই ঠাস। প্রতি বছর এরা নানান কিসিমের যন্ত্র আমদানি করে আমাদের যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য। কত টাইপের স্প্রে, কত টাইপের কয়েল, কত স্মোকগান, কত ওষুধ ছেটানো হয় আমাদের ওপর। কত ভাই-ব্রাদার, বোন-সিস্টারকে যে পগার পার করেছে ওরা, হিসাব নেই। অথচ আমাদের দাবি কতই না মানবিক, মশাবিক। ‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান!’
জীবন জীবনের জন্য একটু সহনাভূতি কি, মশারা পেতে পারে না? ও বন্ধু …
হে মানবজাতি, খুবই মানবিক একটি দাবি জানিয়ে আজকের সভার সমাপ্তি ঘোষণা করছি। দাবিটি সবার মধ্যে হৃদ্যতা বাড়ানোর চাবি হিসাবে বিবেচনা করবেন প্লিজ।
‘স্বেচ্ছায় দিন রক্ত, আমরা হবো
ভক্ত। মানুষ, মশা, পোক, দুনিয়া সবার হোক!