সবাই যে যেভাবে পারলেন, এগিয়ে এলেন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’- উপমহাদেশের কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী ভূপেন হাজারিকা গানে গানে বলেছিলেন মানবতার কথা। সেই মানবতার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামবাসী। সীতাকুণ্ডের আগুনে হতাহতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বন্দরনগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শনিবার (৪ জুন) মধ্যরাত থেকে আগুনে ও বিস্ফোরণে আহতদের আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুরু হয় চিকিৎসক ও স্বজনদের দিশেহারা ছোটাছুটি। ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।

খবর পেয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যান বহু মানুষ। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়ান সবাই।

রাত থেকে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে কাজ করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শুধু তাই নয়, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডিপো থেকে হতাহতদের উদ্ধারে নিজেরাই কাজ শুরু করে। সংগঠন কেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবীদের বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এগিয়ে আসেন।

মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাতে লেখা রয়েছে, ‘কোনো প্রকার ওষুধের প্রয়োজন হলে বলুন, কারও রক্ত লাগলে জানান।’

অনেকে অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসায় স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন, কেউ খাবার পানি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নিম্নআয়ের অনেক রিকশাচালক ও সিএনজিচালককে বিনা ভাড়ায় অগ্নিদগ্ধের বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিতে দেখা গেছে।

এদিকে রোববার ভোরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যান।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও দগ্ধদের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু চট্টগ্রামে নয়, ঢাকার হাসপাতালে যাদের আনা হয়েছে তাদের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সহায়তাকেন্দ্র খুলেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের সবাই রাতভর দগ্ধদের চিকিৎসায় পাশে থেকে একটানা সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের রক্তসহ জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য দিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। তিনি নিজের ফেসবুকে এক বার্তায় বলেন, চট্টগ্রামের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সব ইউনিটকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে অবস্থান নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। আপনার এক ব্যাগ রক্ত হয়তো বাঁচিয়ে দিতে পারে একটি প্রাণ।

বিস্ফোরণে হতাহতদের সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার নেতাকর্মীরা। সংগঠনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও জেলা সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমী জানান, আহত ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তসহ অন্যান্য সহযোগিতার প্রয়োজন। স্থানীয়রা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যারা আশেপাশে অবস্থান করছেন, তাদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আর একটি মৃত্যুও যেন আমাদের দেখতে না হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এক বিবৃতিতে জানান, গণসংহতি আন্দোলন এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতায় রয়েছে। সংগঠনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করে যাচ্ছে।

একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে- যাতে লেখা রয়েছে, ‘রিকশা, সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভাররা ভাড়া নিচ্ছে না। ওষুধের দোকান ফ্রি। রক্তদানে অপেক্ষারত হাজারো রক্তদাতা। শারীরিক শ্রম দিচ্ছেন শত শত স্বেচ্ছাসেবক। খাবার পানি সরবরাহ করছেন যে যেভাবে পারছেন। দল মত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক নেতারা। ছুটে এসেছেন ডাক্তার ভাইয়েরা। আহা মানবতা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *