গাইবান্ধা পিটিআইকে বদলে দিয়েছেন দেশসেরা সুপারিনটেনডেন্ট শামছিয়া

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয় এখানে। যা প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক। আর যদি প্রতিষ্ঠানে প্রধান আন্তরিক হন, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে আসবে আমূল পরিবর্তন।

গাইবান্ধার পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শামছিয়া আখতার বেগম, যিনি যোগদানের পর থেকে প্রশিক্ষণ, নানা উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। হয়ে উঠেছেন শিক্ষককুলের প্রিয়। ২০১৪ সালে দেশসেরা সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে।

১৯৬৪ সালে গাইবান্ধায় টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আয়তন প্রায় ছয় একর জমিতে। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামছিয়া।

জানা যায়, শামছিয়া আখতার ২০১০ সালে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে গাইবান্ধায় যোগদান করেন। ২০০৬ সালে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে তিনি নীলফামারীতে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। তিনি রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে গাইবান্ধায় দুই মাস দায়িত্ব পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বদলী হয়ে সেখানে আট মাস অবস্থান করেন। পরে ২০১১ সালে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট থেকে পদোন্নতি পেয়ে সুপারিনটেনডেন্ট হয়ে আবার গাইবান্ধায় চলে আসেন। সেই থেকে অধ্যাবধি তিনি জেলায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি যোগদানের পর থেকেই অল্প দিনেই প্রতিষ্ঠানটির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে শুরু করে। শিক্ষক বিভাগীয় এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও উপদেশনায় শামছিয়া আখতার দিনে দিনে প্রশিক্ষণের গুণগত মান এবং পরিবেশগত উন্নতি সাধনে সক্ষম হন। পরবর্তী সময়ে পিটিআই গাইবান্ধা সারা দেশের রোল মডেলে পরিণত হয়। তার কর্মপ্রেরণার ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।

২০১৫ সালে পিটিআই গাইবান্ধা সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি তিনি নিজেও ২০১৪ সালে দেশসেরা সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। এ কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন।

শামছিয়া আখতার পিটিআই অফিসের পরিবেশেরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান। চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল দ্বারা বেষ্টিত এই প্রতিষ্ঠানে তার নিদের্শনায় শোভাবর্ধনকারী গাছ ও রাস্তার দুপাশে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়। পাশাপাশি পুকুর পাড়ে অভিভাবকদের জন্য বসার সুব্যবস্থাসহ আধুনিক ছাউনি নির্মাণ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, শিশুদের জন্য তৈরি করা হয় আধুনিক শিশুপার্ক।

এ ছাড়া পুরো পিটিআইকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসেন তিনি। আধুনিক ডিজিটাল ক্লাসরুমে শিক্ষকদের ক্লাস নিশ্চিতকরাসহ একাডেমিক ভবনে মুজিব কর্নার, মুক্তিযোদ্ধা কর্নারসহ শেখ রাসেল রিডিং কর্নার তৈরি করেন তিনি।

পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট শামছিয়া আখতার বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। এমনভাবে চলেছি, যাতে পিটিআইয়ের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। কতটুকু পেরেছি জানি না, তবে যত দিন এই প্রতিষ্ঠানে আছি, স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব।

প্রায় ২০ বিঘা আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি বিশাল খেলার মাঠ, প্রাইমারি স্কুল, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন ও সুপার কোয়ার্টার ছাড়াও একটি মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তার ছোঁয়ায় আমূল বদলে গেছে।

পিটিআইয়ের সাবেক প্রশিক্ষণার্থী ও মালিবাড়ি বোরহানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাদী হাবিবা সুলতানা বলেন, ম্যাডাম একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তার সান্নিধ্যে থাকাটা গৌরবের। এখানে প্রত্যেক শিক্ষককে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারে। আমিও তার অধীনে পিটিআইয়ের ভেতরে পরীক্ষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর ক্লাস নিয়েছি। তিনি খুবই অমায়িক।

সহকারী শিক্ষক মাসুম আব্দুল্লাহ বলেন, একজন শিক্ষককে সর্বগুণে গুণান্বিত করার জন্য ডিপিএড প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত জরুরি। গাইবান্ধা পিটিআইয়ের সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ সুপারিনটেনডেন্ট শামছিয়া আখতার বেগমের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে আমরা ধন্য। তার নির্দেশনায় সঠিক পাঠদান ও সাবলীল শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করি। আমরা পাঠদানে, সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠি, যা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে সহযোগিতা করতে পারি।

প্রধান শিক্ষক লাইজু আক্তার বলেন, আমি চলতি শিক্ষাবর্ষে গাইবান্ধা পিটিআইয়ে ডিপিএড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। তার অধীনে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। প্রাথমিক শিক্ষার মান যাচাইয়ে শিক্ষককেই চ্যালেঞ্জ নিতে হয় আর প্রশিক্ষণ হচ্ছে তার মূল চালিকাশক্তি।

তিনি আরও বলেন, সুপারিনটেনডেন্ট শামছিয়া আখতার সব কাজে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন, যা আমাদের এ পেশায় অত্যন্ত জরুরি। তার সততা, দক্ষতা ও কর্মচাঞ্চল্য আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বলেন, সুপারিনটেনডেন্ট শামছিয়া নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ, ভালো কর্মকর্তা। তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচালনা করছেন। এ পর্যন্ত তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে তার প্রশংসা শুনেছি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি তার কর্মনিষ্ঠায় পিটিআইকে মডেল প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *