নিউজ ডেস্কঃ বর্তমান সময়ে নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন আর্থিক লেনদেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। তবে অটোমেটেড টেলার মেশিন তথ্য এটিএম বুথে কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে গ্রাহকদের প্রায়ই বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটি হলো এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়া।
জরুরি সময়ে কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময়ে প্রায়ই গ্রাহকদের কার্ড আটকে যায়। শুক্রবার আর শনিবারে ব্যাংক ছুটি থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। তাই এটিএম বুথ থেকে কার্ডের মাধ্যমে টাকা ওঠাতে গেলে কিছু বিষয় মাথায় রেখে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়ার কারণ-
পরপর তিনবার ভুল পিন নাম্বার প্রবেশঃ দ্রুত টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকরা তাড়াহুড়ো বা বেখেয়ালে অনেক সময় কার্ডের পিন নাম্বার ভুলে যান। আবার অসাবধানতায় ভুল বাটনে চাপ দিয়ে ভুল পিন নাম্বার প্রবেশ করিয়ে ফেলেন। কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে পরপর তিনবার ভুল পিন নাম্বার বা পাসওয়ার্ড দিলে সিস্টেম সাময়িকভাবে ব্লক হয়ে যায়। আর এটিএম মেশিনের ক্ষেত্রে কার্ডটি আটকে যায়।
বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক জনিত জটিলতাঃ কার্ড ব্যবহারের সময় এটিএম মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তখন গ্রাহকের দেয়া তথ্যগুলো ঠিকমত কাজ নাও করতে ফলে কার্ডটি এটিএম মেশিনের ভেতরে থেকে যায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড ব্যবহারঃ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডগুলো সাধারণত দুই বা তিন বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড এটিএম মেশিনে বারবার প্রবেশ করালে কার্ডটি আটকে যায়। কিছু মাস্টার কার্ড আছে যেগুলো ব্যবহারের জন্য কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে স্বল্পমেয়াদ নেয়া হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের গিফট কার্ডের ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলে যান যে তার কার্ডের স্বল্পমেয়াদটি অতিক্রম হয়ে গেছে। এ ধরনের কার্ডের ক্ষেত্রে প্রায়ই কার্ড বের করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এটিএম সার্ভার জনিত সমস্যাঃ কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময়ে গ্রাহকরা অনেক সময়ে এটিএম সার্ভার সংক্রান্ত জটিলতার সম্মুখীন হন। এমনকি সরাসরি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলেও এ জটিলতায় ভুগতে হয়। সার্ভারের গতি স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে অনেক সময় কার্ড এটিএম মেশিনে আটকে যেতে পারে।
বাহ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কার্ডঃ এটিএম কার্ডটি মুলত একটি আয়তাকার পাতলা প্লাস্টিক বা ধাতব টুকরো। সব সময় সঙ্গে থাকায় বিভিন্ন কারণে কার্ডটিতে হাল্কা ফাটল বা কোন এক প্রান্তের দিকে হালকা ভেঙে যেতে পারে। এমন অবস্থা হলে ব্যবহারের সময় কার্ডটি এটিএম বুথে আটকে যেতে পারে।
অসমর্থিত কার্ডঃ অধিকাংশ এটিএম মেশিন মাস্টার ও ভিসা কার্ড সমর্থিত হয়ে থাকে। এগুলো ব্যতীত ব্যাংকের অন্য কার্ড এটিএম মেশিন অসমর্থিত হতে পারে। এ ধরনের কার্ড ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়–
লেনদেন বাতিলের চেষ্টা ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করাঃ প্রথমেই লেনদেন বাতিলের জন্য ক্যানসেল বাটনে প্রেস করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুরো কার্যকলাপটি সম্পন্ন হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে ছোট ছোট লেনদেনও ধীরগতির হয়ে যায়। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে বুথ থেকে বেরিয়ে না এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত। কেননা এমনও হতে পারে যে, সময় বেশি নিলেও টাকা ঠিকই বেরিয়ে আসছে।
আর লেনদেন যদি বাতিল হয়েই যায়, তাহলে সেই অতিরিক্ত সময় পর কার্ডটি বেরিয়ে আসতে পারে। তাই বুথ থেকে বেরোনর আগে আর্থিক লেনদেনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরি।
ঘটনার খুঁটিনাটির রেকর্ড নেওয়াঃ এটিএম মেশিনে কার্ড আটকে গেলে অস্থির না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সমস্যার খুটিনাটি লিখে নিতে হবে। কোনো ব্যাংকের কার্ড, কার্ডের নম্বর, মেয়াদ, কোনো অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তার নম্বর, ঘটনার সঠিক সময় এবং কার্ড আটকানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কিভাবে কার্ডটি ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি মনে করে লিপিবদ্ধ করে ফেলতে হবে।
সমস্যার কথা বুথ কর্মকর্তা ও কাস্টমার কেয়ারে জানানোঃ সব লিপিবদ্ধ করা হলে এবার ধীরস্থিরভাবে প্রথমে বুথের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সব জানাতে হবে। প্রায় ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। সমস্যার সমাধান না হলে তিনি রেজিস্ট্রি খাতায় তা লিপিবদ্ধ করে নেবেন। কর্মকর্তা না থাকলে নিদেনপক্ষে নিরাপত্তারক্ষীকে জানিয়ে রাখতে হবে।
পরিশেষে ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা জানাতে হবে। বিশেষ করে কার্ডের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করতে বলতে হবে। সমস্যাটি চূড়ান্তভাবে সমাধানের জন্য কাস্টমার কেয়ার থেকে সম্ভাব্য সব রকম নির্দেশনা দেওয়া হবে