অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গত দুই দিনে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শেরপুরের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মহারশি নদী উপচে গতকাল বৃহস্পতিবার ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। পাশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া ঝিনাইগাতী বাজারে হাঁটুপানি হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, দিঘিরপাড়, রামনগর এলাকায় মহারশি নদীর পানির তোড়ে ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে ঘর-বাড়ি, ২০-২৫টি মৎস্য খামার, আউশের ক্ষেত, আমনের বীজতলা, বিপুল পরিমাণ সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ঝিনাইগাতী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আহম্মেদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, ধানশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে থইথই করছে। ধানশাইল বাজারের অধিকাংশ দোকানপাটে পানি উঠেছে।পানির তোড়ে ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা-চাপাতলী সড়ক ভেঙে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। পাগলার মুখ এলাকায় প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে হাতীবান্ধা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের মানুষের চলাচলের সড়ক এবং একটি কাঠের সাঁকো। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে চার গ্রামের মানুষ।

দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে তাঁর গ্রামের প্রায় ২০-২৫টি মৎস্য খামার, জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁর ভাষ্য, মাত্র তিন মাস আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেল ।ঢলের পানিতে খামারের প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি করেছেন একই গ্রামের কৃষক শফিউল্লাহ দুলাল। তিনি জানান, তাঁর এলাকার আতা ও শহিদুল ইসলামের কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, কামারপাড়াসহ চারটি গ্রামের যাতায়াতের প্রধান সড়ক ও একমাত্র কাঠের সেতু নদীতে চলে গেছে। ফলে মানুষ বিপদে পড়েছে।ঝিনাইগাতীর কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন দিলদার জানান, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ২৩ হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে। ৩৮ হেক্টর জমির সবজি পানিতে নিমজ্জিত।ঝিনাইগাতীর ইউএনও ফারুক আল মাসুদ জানান, গৌরিপুর ইউনিয়ন ছাড়া ছয়টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে। উপজেলা পরিষদে হাঁটুপানি হওয়ায় অফিসের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।

শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বয়ে আসা সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিংগাবরুনা ও রানীশিমুল ইউনিয়নের রাঙ্গাজান, বালিজুরি, খারামোড়া, আয়নাপুর বাবেলাকোনাসহ কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত।
শ্রীবরদীর ইউএনও নিলুফা আক্তার বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে পরিদর্শনে যাচ্ছি।’

পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জেসমিন খাতুন বলেন, মেঘালয় রাজ্যে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজান থেকে ঢল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারশি নদীর পানি ১০ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে ।শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার গতকাল বিকেলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি দেখতে যান। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *