অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামে গুয়াহাটিতে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই এলাকার ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই পানি নামা শুরু করবে। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় এমনিতেও বৃষ্টি বেশি ছিল। এর সঙ্গে নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এনডিটিভি জানিয়েছে, টানা তিন দিন ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিতে আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, এতে পুরো শহরের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নগরীটিতে বেশ কয়েকটি ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত তিন জন আহত হয়েছে।

আসাম-মেঘালয়ের বন্যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। রাজ্য দুটি থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে হু হু করে। ইতোমধ্যে সিলেট-সুনমাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে মে মাসের মাঝামাঝিতে বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষদের।

জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, দক্ষিণ সুরমা, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিলেট নগরের অন্তত ৩০ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার ৮০ শতাংশ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শহরের প্রায় সব বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। শুক্রবার সকালে সুরমা পয়েন্টে বন্যার পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আসাম-মেঘালয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর প্রভার পড়বে। এতে বন্যা আরও দীর্ঘ হবে।

অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে তিস্তা অববাহিকার চারটি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে বলে মনে করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ব্রহ্মপুত্রের পানি যমুনা দিয়ে নামার সময় তিন–চার দিনের মধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত বন্যার পানি চলে আসতে পারে।

এদিকে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে আজ সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীতে আজ দুপুর পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রংপুরে ১০৯ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি স্থানে এবং দেশের বাকি এলাকার বেশির ভাগ স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *