আসাম-মেঘালয়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট, ওপেন স্লুইচগেটে শঙ্কায় সিলেট

নিউজ ডেস্কঃ
ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বন্যার কারণে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে আসাম রাজ্য সরকার। তাছাড়া পানি ওভারলোড হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে মেঘালয় এবং আসাম রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কপিলি নদীর স্লুইচগেট।

ফলে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল স্রোতের জলধারা। যার প্রভাবে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। এরই মধ্যে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ছে প্রতিমুহূর্তে।

তবে আশার খবর হচ্ছে, আসাম ও মেঘালয় সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দফতর (ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিকাল ডিপার্টমেন্ট বা আইএমডি)। পাশাপাশি আবহাওয়া সম্পর্কিত এই পূর্বাভাস দিয়ে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আসাম ও মেঘালয়কে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আসাম এবং মেঘালয়ের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ইতোমধ্যেই অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রতিদিন ১০০ মিমি, ২৫০ মিমি, এমন-কি কোথাও কোথাও ৩০০ মিমি-র বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় আসাম এবং মেঘালয়ে মঙ্গল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রেড অ্যালার্ট জারি করার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের জন্য আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে সতর্কতা জারি করেছে ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিকাল ডিপার্টমেন্ট।

সিনিয়র বিজ্ঞানী সঞ্জয় ও’নিল শ আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে দেখা গেছে, ধুবড়িতে ১৪০ মিমি, দুধনৈ কেভিকে (এডব্লিউএস) ১২০ মিমি, শেলায় ৩৪০ মিমি, সোহরায় (আরকেএম) ৩৩০ মিমি, মাওকিরওয়াতে (এআরজি) ৩৩০, উইলিয়ামনগরে ২২০ মিমি, জোয়াই (এডব্লিউএস) ১৫০ মিমি, খ্লিহরিয়েটে ১৩০ মিমি এবং টিকরিকিল্লায় ১০০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে আসাম-মেঘালয়ের এমন ভারী বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে সিলেট। ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অবস্থা সর্বশেষ বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকায়।

এর আগে গত ১৫ মে থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। সেই সময়ে নগরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন। সেই দুর্ভোগের রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গতের জন্য এরই মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ ২৯৮ মেট্রিকটন ডিআরএ-এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নগদ অর্থও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দুপুর ১২টা পর্যন্ত কানাইঘাটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারার পানি। এছাড়া সারিঘাট পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সকাল থেকে শুধু কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তাছাড়া বাকি সবকটি পয়েন্টে পানি অনেক বেড়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মী কবির আহমদ জানান, বিগত বন্যার পানি থেকে এবারের বন্যার পানি অন্তত ২ ফুট বেশি। নিজের বসতভিটাসহ তার এলাকার হাজারো মানুষ বানের জলে আক্রান্ত। মানুষজন বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক তথ্য আপাতত নেই। তবে বন্যার আগাম প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। ইতিমধ্যে জেলার সব উপজেলার জন্য ২৯৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী জানান, গত তিনচারদিন সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও এখন আর খুব বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে উজানের দিকে প্রচুর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *