অনলাইন ডেস্কঃ বুধবার বেলা ১১ টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এসময় দেশে চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি পদ্মা সেতুর সমীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল ।, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে আমরা আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি ,পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গুণগত মানে আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অনেকেই সরে গেছেন, আমাদের সমালোচনা করেছেন। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু জামিলুর রেজা সরে যাননি। পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। তিনি বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে পদ্মা সেতুটা দেখে যেতে পারতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা বড় সেতু মাত্র নির্মাণ করলাম। এটা আগে চালু হোক, তারপর প্রয়োজনীয়তা বুঝে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে ভাববো। তবে আগে দেখবো একটা প্রকল্প করার পর সেখান থেকে রিটার্ন কী আসবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই রুটে এখন রাস্তা কম। আগে আরিচা পর্যন্ত ঘাট ছিল। সেখানে আমরা সাত কিলোমিটার রাস্তা বানিয়ে পাটুরিয়াঘাট তৈরি করেছি। এখন এদিক দিয়েও যাতায়াত সহজ হয়েছে।
বন্যা পরবর্তী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায়ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যার পর কৃষকরা যেন কৃষিকাজ করতে পারেন সেজন্য বীজ, সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যেন মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
‘আমি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে আশ্বাস দিতে চাই, সরকার আপনাদের পাশে আছে। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে আমরা সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। আমরা তার ব্যবস্থাই করছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও সাধ্যমত দুর্গত মানুষের ঘরে শুকনো ও রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে গেলে বাড়িঘর মেরামত এবং কৃষি পুনর্বাসনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের নির্দিষ্ট করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একশ/সোয়াশ বছরের মধ্যে এমন প্রলয়ঙ্কারী বন্যা হয়নি। এবারের বন্যা স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম। গ্রাম, নগর, শহর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত হয়েছে। বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি।
বন্যার্তদের সহায়তায় প্রশাসনসহ সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীমাতৃক দেশ আমরা। বন্যার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। এ জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো আমাদের তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, “বন্যা একদিক থেকে আশীর্বাদ। কারণ, এতে ভূগর্ভস্থ্য পানির স্তর উন্নত হয়। জমির উর্বরতাও বাড়ে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের বন্যার সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। কেননা, নদীমাতৃক দেশ আমাদের। এখানে বৃষ্টি হবেই, বন্যা হবেই। এ জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো আমাদের তৈরি করতে হবে।
বুধবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।