পাঠকের লেখা : আর ক’টা দিন পরই মুসলমানদের দ্বিতীয় মহাউৎসব ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিভিন্ন গৃহপালিত পশু কোরবানি দিবেন। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। প্রায় ৮৮% মুসলিম বাস করছে এই দেশে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের চতুর্থ মুসলিম জনসংখ্যাবহুল রাষ্ট্র হল বাংলাদেশ। এবং এই দেশের রাষ্ট্রধর্মও ইসলাম। তাই সকল মুসলমানদের ঈদকে নিয়ে আনন্দ ও আগ্রহের শেষ নেই।
ইসলাম ধর্মের অন্যতম নবী ও রাসুল ইব্রাহীম আঃ এর যুগ থেকে যুগে যুগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রবিত্র হজ্জের মাসে সামর্থবানরা তার নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী গরু, ছাগল, দুম্মা, ভেড়া, উট, মহিষ কোরবানি দিয়ে থাকেন। এইবারও সারা দেশে অনেকেই কোরবানি দিবেন। হাটে যাওয়া, পশু কেনা, গোস্ত কাটা, বিতরণ করা থেকে অনেক পরিশ্রম করে থাকি আমরা কিন্তু যখন কুরবানি বর্জ্য ফেলার সময় আসে তখন অন্যের হাতে ছেড়ে দেই। রাজধানী ঢাকায় সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন এলাকায় বর্জ্য অপসারণের জন্য কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঈদের দিনও শহরটাকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
এই শহর এই দেশ শুধু তাদের নয়। এই শহর এই দেশ এই গ্রাম আমাদেরও। আসুন আমরা সচেতন হই। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির বর্জ্য ফেলে শহরকে পরিষ্কার রাখি। প্রায় ঈদের দিন বৃষ্টি হচ্ছে যার কারনে বর্জ্য অপসারণ আরো কঠিন হয়ে পড়ে। কোরবানির বর্জ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দুষিত করে বায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। পত্রিকা মারফত জানা গেছে কোরবানি ঈদে সারাদেশে গরু, মহিষ, ভেড়া, খাসিসহ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ পশু জবাই করা হয়।
রাজধানী ঢাকা মহানগরীসহ দেশের সর্বত্র ঈদের পরের দিনও বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু জবাই করা হয়।আর এগুলো জবাইএর নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। গ্রামে গঞ্জে মাঠে,ময়দানে কিংবা পুকুর,নদীর ধারে পশু জবাই করা হয়। কিন্তু শহরের ক্ষেত্রে স্থান সংকটে ভুগতে হয়। জবাইকৃত পশুর বর্জ্য-রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, গোবর, হাড়, খুর, শিংসহ যাবতীয় উচ্ছিষ্টের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনার অভাবে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
শহরে জায়গা সংকটের কারনে রাস্তায়,ফুটপাতে,অলিগলিতেই পশু জবাই করে সেই পশুর বর্জ্য সেখানেই ফেলে রেখে আসেন অনেকে নতুবা পাশবর্তি ঝিল,পুকুর,খাল কিংবা নদীতে ফেলা হয়। এতে করে মারাত্মক দুষনের সৃষ্টি হয়। দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু বহন করা এই দুষনের শিকার হতে হয় মানুষকে। আমাদের সচেতনতা এই দুর্ভোগ কমাতে পারে। বিশেষ করে শহরগুলোতে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হয় প্রতিনিয়ত। ডাস্টবিন থাকলেও নেই তার ব্যবহার। সারা দেশে ছোট বড় শহর সহ রাজধানী ঢাকায় বর্জ্য অপসারণের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এমনিতেই জনসংখ্যার চাপ তার উপর ঘনবসতি এলাকা রাজধানী ঢাকা।
রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার টন ময়লা-আবর্জনা জমে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ তিন হাজার টন পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা সম্ভব হয় কিন্তু বাকি চার হাজার টন ময়লা-আবর্জনা তো আর পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এই বর্জ্য বাতাসে মিশে নিশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব বর্জ্যের প্রায় ২০ শতাংশই প্রাণঘাতী জীবাণু বহন করে। ফলে নানান রগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ কোরবানি ঈদে বর্জ্য অপ্সারণের জন্য সরকার জোর দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সচেতনতা ছাড়া সরকারসহ পরিচ্ছন্ন কর্মীদের শহর পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ সফল হবে না।
কোরবানি দেওয়া একটা এবাদত। পরিষ্কার পরিচ্ছতা ঈমানের অঙ্গ। আমরা এদেশের নাগরিক তাই দেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদেরও সমান। সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঘোষনা দিয়েছে কোরবানির বর্জ্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে। নিশ্চয় খুব ভাল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে দুই সিটির ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে আরও প্রায় ১৩ হাজার যুক্ত করা হবে। নতুন যুক্ত হওয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুধুমাত্র কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন। এতসব পরিচ্ছন্নকর্মী তাদের ঈদ ফেলে আমাদের সবার জন্য শহর পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত থাকবেন তাহলে কিভাবে আমরা কোরবানির বর্জ্য সহ যাবতীয় বর্জ্য যত্রতত্র কিভাবে ফেলতে পারি? এইসকল বর্জ্য নর্দমায় গিয়ে পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটায়।
নদীতে বর্জ্য পদার্থ মিশে দুষিত করছে নদীর পানি। যে বুড়িগঙ্গার পানি মানুষ একসময় পান করত আজ সেই বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে নাকে হাত দিয়ে হেটে যায় মানুষ! আমরা নিজেরাই নিত্যদিনের ময়লা,আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে ফেলছি আবার নিজেরাই রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বর্জ্য দেখে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারকে গালমন্দ করছি। তাই আসুন এই ঈদে আমরা সচেতন হই।
কোরবানির বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন অথবা মাটির গর্তে পুতে ফেলি। নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি আর শহরটাকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সারা দেশে মিলেমিশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সাহায্যের হাত বাড়াই। এই ঈদ হোক সুন্দর,স্বচ্ছ ও দুষনমুক্ত এই প্রত্যাশা সবার।
কলাম লেখক- হিমেল আহমেদ