নেতৃত্বের শূন্যতা ও দায়িত্ববান দের অবহেলা ও অসচেতনতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার সকল উন্নয়ন

নিউজ ডেস্ক : বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও , এফ বি সি সি আই এর পরিচালক মাছুদুর রহমান মিলন। সম্প্রতি বগুড়াকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেয়া তথ্যটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও ভৌগলিক কারণে বগুড়া অন্যান্য জেলার চেয়ে উর্বর হলেও পাকিস্তান আমল থেকে অদ্যাবধি অন্যান্য জেলার চেয়ে উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছি। যদিও বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় কিছুটা স্মরণ করে মানুষ। নেতৃত্বের অভাবে বগুড়ায় যে সমস্যা গুলো হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য :

১। প্রথমত বগুড়া পৌরসভাঃ
সে সময়ে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা না করেই ২১ টি ওয়ার্ডে বর্ধিত করা হয়, যার ফলে বরাদ্দ থেকে শুরু করে বিশাল ব্যয়ভার এর মধ্যে ঘাটতি দেখা যায় এ জনবহুল পৌরসভায়। জনবহুল এ পৌরসভায় পানি নিষ্কাশন, যানজট সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থা। যা আমাদের পাশের ই জেলা রাজশাহী থেকে বহুগুণ পিছিয়ে। যে সময়ে ২১ টি ওয়ার্ড বর্ধিত করা হয়, সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা না করেই বর্ধিত করা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। সব কিছুই যোগ্য নেতৃত্বের অভাব।

২। সাংস্কৃতিক দিক দিয়েঃ
সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হওয়ার পরেও আমাদের পর্যটন খাত পিছিয়ে আছে। এত পর্যটক আকর্ষণীয় জায়গা থাকার পরেও আমরা সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে পারি না। মহাস্থান গড়ে বিদেশীদের আকর্ষণ করার এবং বিনোদন করার মতো কোন কিছু এখনো গড়ে ওঠেনি। যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পর্যটন এরিয়া তে গড়ে ওঠে। প্রয়োজনে এটি PPP (Public Private Partnership) এর আন্ডারে নিয়ে গড়ে তোলা দরকার। সব মিলেই এখানেও নেতৃত্ব শূন্যতা।

৩। শিল্প ক্ষেত্রেঃ
বর্তমানে বগুড়া শহরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে ওঠায় বিভিন্ন জায়গায় ৩ ফসলি জমি নষ্ট করে এসব গড়ে ওঠে যা কৃষির অগ্রযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে আরও উন্নতি ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার জন্য দরকার একটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল। অর্থাৎ সরকারি উদ্দ্যগে EPZ অথবা সরকারি সহায়তায় PPP এর আন্ডারে এটি গড়ে ওঠা দরকার। এক্ষেত্রেও আমাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতা থেকে যায়।

৪। শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ
মাধ্যমিক – উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার দিক দিয়ে বগুড়া উত্তরের অন্যান্য জেলার থেকে এগিয়ে থাকলেও মূলত বগুড়ায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে না ওঠাও আমাদেরই যোগ্য নেতৃত্বের অভাব।

৫। স্বাস্থ্যখাতঃ
বগুড়ায় ১২০০ শয্যাবিশিষ্ট শজিমেক হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হসপিটাল, ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট টিএমএসএস হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ সহ আরও ছোট বড় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থাকার পরেও এই শহরে চিকিৎসা সেবা যথেষ্ট আগাতে পারেনি। প্রয়োজনীয় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়ীক চিন্তাভাবনার কারণে প্রকৃত সেবা থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়ে যায়।

৬। এই বিশাল জনবহুল শহরে পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। মূলত, আধুনিক নগরায়নের অভাব এই শহরে।

৭। নদী সংরক্ষণ ও ব্যবহারঃ
শহরের ভেতর দিয়ে করতোয়া নদী বয়ে গেছে, কিন্তু সম্পদ কে আমরা কাজে লাগাতে পারছিনা, সেই সাথে যথাযথ খনন এবং সংরক্ষণ এর অভাবে এটি এখন নর্দমায় রূপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, সারিয়াকান্দি যমুনা ও বাঙ্গালী নদী বয়ে গেছে। যেটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হলে বিনোদনের জায়গা করে তা থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। প্রয়োজনে এটিও PPP এর অধীনে করা যেতো। কিন্তু, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এটিও আগায়নি।

৮। ধর্মীয় ব্যাপারঃ
এই অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল ধর্মীয় ব্যাপারে সচেতন। এখানে মসজিদ, মন্দিরে যার যার ধর্ম শান্তির সাথে পালন করে আসছে।
কিন্তু, আধুনিকতার সাথে ধর্মীয় গবেষণাকেন্দ্র গড়ে না ওঠায় এবং তথ্যভিত্তিক রিসার্চ না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের ধর্মভীরুতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময় ভুল বুঝিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। যা সঠিক নেতৃত্ব না থাকার কারণেই হয়েছে।

৯। ক্রীড়াঙ্গনঃ
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই খেলাধুলায় এগিয়ে আমাদের বগুড়া। তার ই ধারাবাহিকতায় অতীত থেকে বর্তমানে ক্রিকেটে মুশফিক, শফিউল, ঋতুমনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাধুলায় আমাদের অবস্থান গৌরবের। কিন্তু, সঠিকভাবে খেলাধুলার পরিকল্পিত মাঠ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। যদিও এরকম সংকটময় অবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে, আমি নিজস্ব অর্থায়নে আমার পিতার নামে “বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দীন ফুটবল স্টেডিয়াম” করেছি। তারপরেও সংকট থেকে গেছে সঠিক নেতৃত্ব না থাকায়।

১০। পরিবহণ ব্যবস্থাপনাঃ
বগুড়ায় পরিবহনের সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় এবং সঠিক ভাবে ব্যবস্থাপনার অভাবে বিভিন্ন সময় নানান জটিলতা, বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। যা যোগ্য নির্দেশনা এবং নেতৃত্বের ঘাটতি।

১১। অপরিকল্পিত বাজারঃ
বগুড়ায় বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিক ভাবে এবং সঠিক স্থানে গড়ে ওঠেনি। যার ফলে বিভিন্ন সময় শহরে জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং যানজট এর সৃষ্টি হয় যেটিও অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনার কারণেই।

মূলত, এসব সহ নানারকম জটিলতা ও ব্যবস্থাপনার নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বগুড়ার ৭ জন সংসদ সদস্য তন্মধ্যে ২ জন সরকার দলীয়, ৪ জন বিরোধীদলের, ১ জন স্বতন্ত্র। তাঁরাও বগুড়ার এই জটিলতা, সমস্যা নিয়ে কখনো সেভাবে তুলে ধরেনি। এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদেরও এ ব্যাপারে দাবী পেশ করে সমস্যার সমধান করতে পারে।

আরও পডুন: ঢাবি’তে চান্স পাওয়া মমতার দায়িত্ব নিলেন ছাত্রনেতা আহসান হাবীব……

আমাদের সকলের সমন্বিত আলোচনা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমেই এই শহরের উন্নয়ন এবং জটিলতা নিরসনে কাজ করে যেতে হবে আগামীতে।
নয়তো, বগুড়ার অতীতের সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভব হবেইনা বড়ং বহু প্রাচীন অতীতের ন্যায় ভঙ্গুর শহরে পরিণত হতে পারে।