বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনায় বেরিবাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানি ঢুকে দুই উপজেলার ১৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধকোটি টাকার মাছের ঘের। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তালতলী ও পাথরঘাটার হাজার হাজার মানুষকে।

পায়রা নদীর জোয়ারের পানির চাপে তালতলীর তেঁতুলবাড়ী এলাকার নদীর ১০০ মিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে কমপক্ষে ৫০টি মাছের ঘের ও ৮টি গ্রামের কয়েকশ বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার কয়েকশ পরিবারে রান্না বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে পুর্ণিমার প্রভাবে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ১০টি গ্রাম। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় কয়েকশ পরিবারের রান্না বন্ধ হয়ে গেছে।

পাথরঘাটার ট্যাংরা, হাড়িটানা, কোরালিয়া, গহরপুর, নিজলাঠিমারা, রুহিতা, হাজির খাল, বাদুড়তলা, চরলাঠিমারা এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এতে শতাধিক পুকুর ও ১০টি ঘেরের মাছ ভেসে যায়।

এসব এলাকার স্থানীয়রা জানান, তালতলীর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া এলাকায় জোয়ারের তীব্র স্রোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে ওই এলাকার ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়।

অপর দিকে পাথরঘাটার কোরালিয়া খালের বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় লোকালয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। জোয়ারের পানির তোড়ে একাধিক স্থাপনা ও বসতঘরের মালামাল ভেসে গেছে। পাশাপাশি মৎস্য খামারেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িঘরে দুই থেকে তিন ফুট পানি প্রবেশ করেছে।

তালতলীর তেতুলবাড়িয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, বেরিবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমার বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে, এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। যাওয়ার আর কোনো যায়গা নেই। এই পায়রা নদীর পাড়েই থাকি সেই জন্মের শুরু থেকে। তবে এখনো কোনো বেড়িবাঁধ দেখিনি। আমরা বারবার বলার পরও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

এই এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে আমার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাকে।

পাথরঘাটার রুহিতা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে। এখন ছোট মেয়েকে নিয়ে খাটে বসে আছি। রান্নাঘর ও চুলা পানিতে ডুবে গেছে। তাই দুদিন ধরে রান্না হয়নি।

পাথরঘাটার চরলাঠিমারা গ্রামের ছগীর মুন্সী বলেন, বাঁধ না থাকায় আমার উঠান কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। রান্নাঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি। চুলা পানির নিচে তলিয়ে আছে। ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোনো মতে দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়ে বেঁচে আছি।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সাদিক তানভীর বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করেছি।

তাদের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সংস্কারের জন্য বালির জিও ব্যাগ পাঠানো হচ্ছে পানির তোড় সামলাতে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, কোরালিয়া খালের রিং বাঁধটি দুর্বল হওয়ায় পাথরঘাটার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে রিং বাঁধটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।