অনলাইন ডেস্কঃ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি এলাকার ফকির বাড়ি। বাড়ির পেছনে নতুন তিনটি কবরের সামনে মানুষের ভিড়। একই পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে এসেছেন সবাই। তবে নিহত জাহাঙ্গীরের মা সুফিয়া আক্তারের বিলাপ থামছেই না। অন্যদিকে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও একপর্যায়ে কেঁদে ওঠেন বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু।
হাউমাউ করে বলতে থাকেন, ‘এইহানে সাতজনের কবর। তাগর পাঁচজনই মরছে এক্সিডেন্টে। এই সড়কই আমার ভাই, দুই ছেলে, ছেলের বউ আর নাতিরে কাইড়া নিছে। আর কার জীবন নিব আল্লাহই জানে।
ট্রাকচাপায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, পুত্রবধূ রত্না বেগম আর নাতনি সানজিদার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে বাড়ির সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তার ছোট ছেলে শামসুল হক। এর আগে ১৯৯৫ সালে একই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান ছোট ভাই ফজলুল হক। সবাইকেই শায়িত করা হয়েছে বসতঘরের পেছনে।
বারবার সড়কে এমন মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। দুর্ঘটনার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াকে দায়ী করেছেন সবাই। আল আমীন নামে এক যুবক বলেন, আমাদের এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনাটা বেশি ঘটে। ছোট থেকে আমি ৫০ জনের ওপরে মৃত্যু দেখেছি এই সড়কে। এখানে গাড়ির গতিবেগ থাকে চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই রাস্তা পারাপারের সময় বেশিরভাগ মৃত্যুগুলো ঘটে। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থায়ই নেয় না। এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হোক যাতে এমন দুর্ঘটনা বন্ধ হয়।
এর আগে শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম হওয়ায় আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই ওই তিনজন নিহত হন।
তবে এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্ম নিয়ে রাস্তায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পরই জানা যায় জীবিত আছে নবজাতক কন্যা
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে এক্সরে করে শিশুটির ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে গেছে বলে জানা যায়। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে সদ্যজাত শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি শঙ্কামুক্ত আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এই নবজাতক ছাড়াও নিহত জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির এক ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে জান্নাত (১০) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়লেও ছেলে এবাদত (৭) স্কুলে যায় না।