জয়পুরহাট প্রতিনিধি : অসুস্থ মা ও স্ত্রীর চিকিৎসা করতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন রায়হান। ঋণ পরিশোধের জন্য ঢাকায় চালাতেন রিকশা। তবুও শেষ হচ্ছিল না ঋণের বোঝা। এরই মধ্যে পরিচয় হয় কিডনি কেনাবেচা চক্রের এক দালালের সঙ্গে।
এরপর চার লাখ টাকা চুক্তিতে কিডনি বিক্রিতে রাজি হন। অবশেষে কিডনি বিক্রির করতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পড়ে যান ডিবি পুলিশের জালে। বেরিয়ে আসে কিডনি কেনাবেচা চক্রের সদস্যদের নাম। সেই সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।
তারা হলেন, জেলার কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ফুল মিয়া ওরফে রানা ওরফে জুয়েল (৪২), লক্ষিচাপড় গ্রামের আঃ কাদেরের ছেলে জুয়েল রানা (২৮) ও ছত্রগ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ফিরোজ হোসেন (৩৯)।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা তার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনজন ভুক্তভোগীকে উপস্থিত করা হয়।
এ সময় কালাই উপজেলার পূর্ব সরাইল গ্রামের ভুক্তভোগী রায়হান মন্ডল বলেন, আমার মা ও স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। তাদের চিকিৎসা করতে ঋণে পড়ি। সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য চারটি বেসরকারি এনজিও থেকে লক্ষাধিক টাকা ঋণ নেই। সেই টাকা পরিশোধের জন্য ঢাকার মগবাজার মধুবাগ এলাকায় রিকশা চালাতাম।
এতেও ঋণ পরিশোধ হচ্ছিল না। এদিকে টাকার জন্য এনজিও’র মাঠ কর্মীরা চাপ দিতে থাকে। এরই মধ্যে ফুল মিয়া নামের একজন আমাকে কিডনি বিক্রির জন্য বলে। চার লাখ টাকা দিতে চেয়ে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা দেয়। এতে আমি রাজি হই এবং আমার স্ত্রীও রাজি হয়। এরপর পাসপোর্ট এবং ভিসা করা হয়। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আমাদের রক্ত পরীক্ষাসহ যাবতীয় টেস্ট করানো হয়।
তিনি আরও বলেন, টেস্টের পর আমরা বাড়িতেই থাকি। গত তিনদিন আগে কিডনি বিক্রির জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং বাসে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। এসময় ডিবি পুলিশ গাড়ি থামিয়ে আমাদের ধরে তাদের অফিসে নিয়ে আসে। পুলিশ আমাদের বাঁচিয়েছে। আমরা আর কিডনি দেব না।
আরেক ভুক্তভোগী রাজু। তিনি মাত্রাই বহুতী গ্রামের বাসিন্দা। গত আড়াই মাস আগে দেশের বাইরে গিয়ে কিডনি অপসারণ করেছেন রাজু। তিনি বলেন, আমি ঢাকার আশুলিয়াতে বসবাস করতাম আর একটি গার্মেন্টসে কাজ করতাম।
সেখানে ফিরোজ হোসেন নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই আমাকে কিডনি বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করেন। এরপর সাড়ে চার লাখ টাকা চুক্তিতে ভারতের দিল্লিতে গিয়ে কিডনি অপসারণ করি। সেখানে দুই মাস থাকার পর দেশে আসি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, কিডনি কেনাবেচা চক্রের সংঘবদ্ধ দালালরা অসাধু ডাক্তারের মাধ্যমে ভিকটিমদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেশের অভ্যন্তরে করে এবং দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের কিডনি অপসারণ করায়।
পরে ভিকটিমদের নাম মাত্র চিকিৎসা শেষে তাদের হাতে টাকা দিয়ে সারা জীবনের মতো অঙ্গহানী করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভিকটিমদের তথ্যে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের লক্ষে অভিযান অব্যাহত আছে।