পাঠকের লেখা: কিশোর, যুবক, মধ্যবয়সী কিংবা প্রবীণ সবার কাছে এখন এক আশ্চর্য সৃষ্টি হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। গত ৫ বছরের তুলনায় করোনাকালীন সময়ে ফেইসবুকের যেমন গুরুত্ব বেড়েছে তেমনি বেড়েছে তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০১৮ সালে ফেইসবুকের মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন আর বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ফেইসবুকের মোট ব্যবহারকারী সংখ্যা ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন। এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী বিভিন্নভাবে ফেইসবুকের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে এখন ব্যবসায়ী প্রচারণার জন্য ব্যপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট নির্মানের উপর রিচ, লাইক, ভিউ কাউন্টের ভিত্তিতে মানিটাইজেশনের মাধ্যমে অর্থ প্রদান সিস্টেম চালু করেছে অনেক আগেই। ব্যবহারকারীরা তাদের নিজেদের প্রোফাইলে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে একটি টাইমলাইন তৈরি করে তার মাধ্যমে ফেইসবুকের অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
নিজের প্রোফাইলে ছবি আপলোড করে এবং লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিজের মতামত শেয়ার করে। এসব ফেইসবুকের সাধারণ ব্যবহার এবং ইতিবাচক দিক। ফেইসবুকের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর।
ব্যক্তিজীবনের চলাফেরা করতে যেমন ব্যক্তি, সামাজিক ইমেজ পরিস্কার রাখা জরুরি তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিজের প্রোফাইলের সঠিক ব্যবহার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। খামখেয়ালি কমেন্ট, না বুঝে রিয়্যাক্ট কিংবা সত্যতা যাচাই না করেই হুটহাট শেয়ার অপশন ব্যবহার করে মিথ্যা কিছু শেয়ার করা ফেইসবুকের ব্যাক্তি ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে। তাই কোন পোস্টে রিয়্যাক্ট করার আগে সেই পোস্টের সারমর্ম বোঝাটা অত্যন্ত জরুরি।
বিভিন্ন সময় দেখা যায় কেউ জরুরি ভিত্তিতে একজন মুমুর্ষ রোগীর জন্য রক্ত চেয়ে পোস্ট করেছে সেখানে গিয়ে কেউ কমেন্ট করেছে নাইস, আবার কারো বাবা অসুস্থ বা সে কোন শোক সংবাদ পোস্ট করেছে সেখানে কেউ গিয়ে লেখছে শুভ কামনা এগিয়ে যাও। অনুরূপ, কেউ একজন জোকস শেয়ার
করেছে সেটা না বুঝে হাহা রিয়্যাক্ট না দিয়ে কেউ লাইক বাটন চেপে দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় দেখা যায় কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের ছবি শেয়ার করেছে সেখানে গিয়ে কতকগুলো মানুষ অশ্লীল কমেন্ট করে। তাদের ছবি নিয়ে মেমে তৈরি করে। এই রকম অপরিচ্ছন্ন ইমেজের ব্যবহারকারীর জন্য অন্য ব্যবহারকারীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। এগুলো ছাড়াও আরেকটি বিরাট সংকট হচ্ছে ফেইসবুকে ভুল বানানের ব্যবহার।
আরও পড়ুন: নতুন জীবন, সবার দোয়া চাই: অপু বিশ্বাস……
বর্তমানে ফেইসবুকে বাংলা, ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখা যায়। এরমধ্য কেউ বাংলা কথা গুলো ইংলিশ ওয়ার্ডে লেখে, আর বিপত্তিটা বাধে সেখানেই। কারণ আপনি যখন বাংলা কথা ইংলিশ ওয়াডে লিখবেন তখন বিশেষ খেয়াল করে আপনাকে লিখতে হবে। বাংলা উচ্চারনের সাথে যদি আপনি ইংলিশ ওয়াড মিল করে লেখেন তবে তা সঠিক হবেনা। তাই জেনে বুঝে না লিখতে পারলে এটা পরিহার করা উচিত। বানানের কারণেও অনেক কিছুর ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়।
জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু এখন ফেইসবুকে আলোচিত-সমালোচিত হয়। আর বর্তমানে গুজবের আঁতুড়ঘর হলো সামাজিক মাধ্যম। কথায় আছে গুজব নাকি বাতাসের আগে দৌড়ায়। তাই ফেইসবুকে কোন ভিডিও বা লেখা দেখা মাত্র শেয়ার করা বা বিশ্বাস করা থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিরত থাকবেন যতক্ষন পর্যন্ত তা কোন অথেনটিক (নির্ভরযোগ্য) সাইট থাকে প্রচার না হয়।
কারণ ফেইসবুকে অসংখ্য ভুয়া পেজ রয়েছে যারা ভাইরাল হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থে এই গুজব ছড়ায়। তাই ফেইসবুকে বন্ধু নির্বাচন, বিভিন্ন পেইজে লাইক/ফলো দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর ফেইসবুক ব্যবহারকারীর ব্যাক্তিগত ইমেজ পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। হঠাৎ কিছু শেয়ার করা, কাউকে না চিনে বন্ধু রিকোয়েস্ট পাঠানো, উল্টাপাল্টা রিয়্যাক্ট দেয়া, বিনা প্রয়োজনে কাউকে কল মেসেজ দেয়া, কমেন্টে কটু কথা বলা, কারো ব্যাক্তিগত বিষয়ে নিয়ে ট্রল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু সামাজিক এই মাধ্যম আমাদের সমাজে বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই এই মাধ্যমের সঠিক।
ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।
লেখক: মোঃ হাবিবুর রহমান বিপুল
মোবাঃ ০১৭৫২৪৪৫৮০৯