অনলাইন ডেস্কঃ আদালতে মামলা করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আবেদন এবং আদেশ বা রায়ের অনুলিপি সংগ্রহ করার প্রতিটি পর্যায়ে সরকারকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। আদালতে এটা কোর্ট ফি নামে পরিচিত। অন্যদিকে জমি কেনা বা হস্তান্তর করতেও রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন দামের রেভিনিউ স্ট্যাম্প। কিন্তু এই কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প এখন সরবরাহ করছে জালিয়াত চক্র। এতে সরকার এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আস্থাপূর্ণ হওয়ায় বিএনপির গাত্রদাহ শুরু
গত ১৯ মে সুপ্রিম কোর্ট ২১টি মামলায় ব্যবহূত কোট ফি যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, এর মধ্যে ২০টির কোর্ট ফিই জাল। শুধু উচ্চ আদালত নয়, দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও একই ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জালিয়াত চক্রকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এবার নকল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প শনাক্তের দিকে নজর দিয়েছে প্রশাসন। কেনা হচ্ছে শনাক্তকারী যন্ত্র।
কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের পাশাপাশি চালান ও পে অর্ডারও নকল হচ্ছে। নিরাপত্তা যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের জালিয়াতি শনাক্ত করা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র জাল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৩৪টি ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ব্যবহার হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক মামলা, ক্ষতিপূরণ, বাজারমূল্য আছে বা নেই- এ রকম স্থাবর সম্পত্তি, দখল পুনরুদ্ধার, নিষেধাজ্ঞা, মুসলিম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়, দলিল রদ, দলিল সংশোধন, চুক্তি রদ, ঘোষণা মামলা-পরবর্তী প্রতিকার, চুক্তি প্রবল, ইজমেন্ট অধিকার, বন্ধক খালাস, ফোরক্লোসার, মোহরানা, ভরণপোষণ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, সাধারণ ঘোষণা, বাটোয়ারা ও পৃথক দখল, ভাড়া, ডিক্রি রদ, ঘোষণা ও নিষেধাজ্ঞা, আপিল ও রিভিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়ের হওয়া মামলা।
আইনজীবী বা ব্যক্তি পর্যায়ে কোর্ট ফি কিনে ব্যবহার হয় বলে জালিয়াত চক্র সুযোগ পাচ্ছে। এগুলো বিক্রি করেন ভেন্ডাররা। শুধু ঢাকা আদালত এলাকায় সাড়ে আটশ ভেন্ডার রয়েছেন। সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভেন্ডারের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। এসব ভেন্ডার কোর্ট ফি, রেভিনিউ স্ট্যাম্পসহ এ ধরনের যাবতীয় ফরম বিক্রি করে থাকেন।
জালিয়াত চক্র নানা উপায়ে এ কাজে ভেন্ডারদেরও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। চক্রটি তিন ধাপে জাল কোর্ট ফি ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে। প্রথমে তারা নিজস্ব প্রেসে জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি প্রিন্ট করে। এরপর নম্বর বসায়। সবশেষ সেলাই মেশিনের সহায়তায় বিশেষ পদ্ধতিতে স্ট্যাম্পে ডটগুলো দেয়। এরপর ভেন্ডারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আসল স্ট্যাম্পের সঙ্গে জালগুলো মিলিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।
আদালতে ১৫০ টাকার কোর্ট ফি থেকে মামলাভেদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার কোর্ট ফির প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের সরকারি নথিতেও কোর্ট ফি লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে ২ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কোর্ট ফি চালু আছে। এই কোর্ট ফি বিক্রি করে সরকার প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে।
অন্যদিকে বাজারে বর্তমানে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের রেভিনিউ স্ট্যাম্প রয়েছে। দলিল মূল্য যা-ই হোক না কেন, নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যায়। এর বেশি মূল্যমানের স্ট্যাম্পের প্রয়োজন হলে বাকি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, নকল কোর্ট ফির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শহীদুল আলম ঝিনুক বলেন, তাঁরা দলিল লেখকদের লাইসেন্স দেন। ভেন্ডারদের লাইসেন্স দেয় জেলা প্রশাসন। দুই বিভাগের কর্মরতরা একটু সচেতন হলেই কোর্ট ফি বা রেভিনিউ স্ট্যাম্প-সংক্রান্ত জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব।