অনলাইন ডেস্কঃ  খাইরুল নেসা বেগম, ১৯৭৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের আওতাধীন পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে যোগদান করেন। এক পদে দীর্ঘ ৩৪ বছর চাকরি করে ২০১০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। বয়সের ভারে এখন তেমন কিছুই করতে পারেন না এই নারী। তাঁর আট সদস্যের সংসার চলে স্বামীর ছোট মুদি দোকানের আয়ে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের পড়াশোনার টাকাও আসে এখান থেকে। চাকরি সুবাধে কিছু পেনশন পেলেও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে খুবই কষ্টের চলছে তাঁদের সংসার।আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী-শ্বশুর আটক

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সালনগর ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) হিসেবে কাজ করেন মো. রফিকুজ্জামান। ২০১২ সালে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের নিয়োগবিধি না থাকায় দীর্ঘ প্রায় এক যুগ কর্মজীবনে পদোন্নতির মুখ দেখেননি এই কর্মচারী।

একই পদে চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নে কাজ করেন মো. মাসুদ পারভেজ। ২০০৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। দীর্ঘ ১৪ বছর পার হলেও কোনো পদোন্নতি হয়নি। শুধু খাইরুল নেসা বেগম, মাসুদ বা রফিক নন, সারাদেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ২৮ হাজার কর্মীর একই অবস্থা। নিয়োগবিধি না থাকায় আটকে আছে পদোন্নতি। ফলে দিন দিন বাড়ছে ক্ষোভ আর হতাশা। এমন কষ্ট নিয়ে অবসরে গেছেন আরও প্রায় ১৩ হাজার কর্মচারী।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (এফপিআই)। ১৯৬০ সালের দিকে পরিবার পরিকল্পনা সেবাটি সরকারি হাসপাতালভিত্তিক করা হয়। এরই মধ্যে পাঁচ যুগ পেরিয়ে গেলেও কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির কোনো বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি আজও।

যদিও স্বাধীনতার পর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন ওই কর্মচারীরা প্রকল্পের আওতায় ছিলেন। ১৯৯৬ সালে কর্মচারীদের রাজস্ব্ব খাতে স্থ্থানান্তর করা হয়। ওই সময় অধিদপ্তরের নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা নতুন করে হালনাগাদ করার কাজও শুরু হয়

। এরপর ২৬ বছর পার হয়েছে এখনও চূড়ান্ত বিধিমালা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। অধিদপ্তরের অধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) ২ হাজার জন ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের (এফডব্লিউএ) ১১ হাজার কর্মচারী সারাজীবন একই পদে থেকে অবসরে যেতে হয়েছে।

পরিবার কল্যাণ সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা বেগম বলেন, ৩২ বছর ধরে একই পদে কর্মরত। কোনো পদোন্নতি নেই।মাঠ কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, সরকারের অন্যান্য বিভাগে যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে কর্মচারী নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হচ্ছে না। যে কারণে ২৮ হাজার মাঠকর্মী দুঃখ-কষ্টে দিন পার করছেন।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবং নিয়োগবিধি সংশোধন পূর্বক প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. মহসিন উদ্দিন সাংবাদিকদের  বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ১৯৬০ সালে একটি নিয়োগবিধি ছিল। সেখানে ৫২ ধরনের পদ ছিল। এখন ২৫০ ক্যাটাগরির পদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবিধি ছিল না। আমরা একটি খসড়া নিয়োগবিধি প্রণয়ন করেছি। দীর্ঘদিন নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোনো কাজই একদিনে করা সম্ভব নয়। আশা করছি দ্রুত সময়ে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হবে।