অনলাইন ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, রাস্তাঘাট ও বসতভিটা-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৮০ নং চাঁদপুর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের একটি ভবন। আরেকটি ভবন নদীর কিনারায় ঝুলে আছে।

আরও পড়ুনঃ টাকা ফেরত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস

যেকোনো সময় সেটিও বিলীন হয়ে যাবে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাঁচটি গ্রামে ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীর বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। তাদের অভিযোগ ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে যমুনার ঘূর্ণাবর্তের কারণে দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রাম সদিয়া চাঁদপুর গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। তীব্র ভাঙ্গনের কারণে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন মঙ্গলবার ভোরের দিকে নদীগর্ভে চলে যায়। আরেকটি ভবনে নদীর কিনারায় ঝুলে আছে। যে কোন সময় সেটিও বিলীন হয়ে যাবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় ভবন আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু ছিল না। পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার অনুরোধ করলেও ব্যবস্থা না নেয়ায় স্কুলটি রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ করে দিতো তাহলে ভবনটি বিলীন হতো না। দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন জানান, স্কুল ঘর নদীতে চলে গেছে। আমরা এখন পড়াশোনা করবো কোথায়?

সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ জানান, যমুনার পানি বাড়া-কমার সাথে সাথে এ অঞ্চলে তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও যথাযথভাবে কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নয় ৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে।

চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, কয়েকদিন আগেও যমুনা নদী থেকে স্কুল ভবনটি ২০-২৫ ফুট দূরে ছিল। ওই সময় যমুনার পানিও কমে গিয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল আর পানি বাড়বে না। তারপরও আমরা শ্রমিক দিয়ে নদী তীরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে, মাটি ও গাছের ডালপালা ফেলে স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম।

কিন্তু কয়েক দিন ধরে নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি ভাঙন শুরু হয়। সকালে স্কুল ভবনের তলা ধসে ভাঙন শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরই ভবনটি হারিয়ে যায়। আরেকটি ভবন ঝুলে আছে। যেকোনো সময় সেটিও হারিয়ে যাবে। আমরা সার্বিক বিষয় দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় মিল্টন হোসেন জানান, আগের দিন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পরদিন সকাল থেকে বস্তা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই স্কুল ভবনটি বিলীন হয়ে যায়। এ কারণে আর কাজ শুরু করা হয়নি। তবে ওই এলাকায় একটি স্থায়ী প্রকল্পের কাজ করবে পাবনার কৈতলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি শাখা।

আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার বেড়া কৈতলা নির্মাণ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা জানান, বন্যা এবং নদী তীর ক্ষয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ কর্মসূচি প্রকল্প-২ এর আওতায় একশত কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মেহেরনগর থেকে এনায়েতপুর বাঁধ পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় আন্ডার ওয়াটার ওয়েব প্রটেকশন কাজ করা হবে। যেটি জিওব্যাগ দিয়ে করা হবে। বর্তমানে টেন্ডার হয়েছে কিন্তু ঠিকাদার সিলেকশন হয়নি। ইভ্যালুয়েশন চলছে। ধারনা করছি আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু করা যাবে।