কফিনে শেষ পেরেকটা মেরে দিয়েছো

কফিনে শেষ পেরেকটা মেরে দিয়েছো
(সিজুল ইসলাম)

এখন আর আমি তোমাদের চিৎকার শুনিনা
বাবার গোঙ্গানি শুনি মায়ের আর্তনাদ
ছোট ভাইয়ের বারবার ছুটে আসা
বোনের গগনবিদারী চিৎকার
ভাই তুমি আসবানা আমার বিয়েতে?
কথা দিয়েছিলে আমায় মেহেদী পড়াবে
তাই কি তোমার শরীরের রক্তে
আমার হাত ভেজা?

কফিনের শেষ পেরেকটা মেরে দিয়েছো
এখন আর আমি তোমাদের চিৎকার শুনিনা।
বউটা বেরোনোর সময় সাদা গেঞ্জি দিলো
বললাম তুমি আমায় সাদা কাপড় দিলা?
তখনই যেন বুঝতে পেরেছিলাম
আর ফেরা হবেনা, মনে বল আমরা অগ্নিসেনা!

বিস্ফোরণের পর সামনে থেকেই লড়ছি সবাই
কিন্তু বারবার বিস্ফোরণে অপ্রস্তুত মোরা
ঢাল ছাড়া যেন যুদ্ধে আমরা
আমার দেহটাও ছিটকে দূরে চলে যায়
বিয়ের সময় পাওয়া ঘড়িটা হাতে ছিল
কিন্তু থেমে গিয়েছিল জীবন ঘড়ি
কবজিসহ উড়ে গেছে
হেলমেট ছিল প্রচন্ড আঘাতে সেটিও
আমার মাথার সুরক্ষা দিতে পারেনি
আমার পা দুটোয় গামবুট ছিল
পুড়ে চামড়ার সাথে একাকার হয়ে গেছে।

মৃত্যুর আগে খুব অল্প সময় পেয়েছি
প্রিয় মুখগুলো মনে করবার
শেষবার বেরোনোর সময় মেয়েটা ঘুমিয়ে
চার বছরেই কি মায়া জন্মে গেছে
বড় অকালে বাবা হারালি রে মা।

ছিন্ন ভিন্ন দেহখানা এক জায়গায় করে
মর্গে জায়গা পেয়েছিল অজ্ঞাত পরিচয়ে
পরিচয় মেলার পর ডোমও নিলো পাঁচশো টাকা
হায়রে অগ্নিসেনা! তোমার লাশ ছাড়েনা
স্বজন কাঁদে সেসব আবেগের কোন দাম নেই।

বউটা বারবার পাগলীর মত ছুটে আসে
কফিনে পেরেক মারা মুখটা
একবারও দেখতে পায়নি সে
বারবার মূর্ছা যাচ্ছে সে।

সেদিন হঠাৎ মধ্যরাতে কাঁধে মাথা রেখে
সামনে ঘুরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো
শোনো! আমাদের একটা ছেলেও চাই
ওরা দু ভাইবোন ঝগড়া করবে
রাগ করবে, অভিমান করবে
আবার ভালবেসে জড়িয়ে ধরে একসাথে ঘুমাবে
জানো তোমার মেয়ে কি করেছে দুপুরে?
দাদু আর নানুকে ভিডিও কল দিয়ে বলে
বাবার ছুটি হলে ঈদে বাড়ি যাব আমরা।

মেয়েটা একটু বড় হয়েছে ঈদে ছুটি মিলবে তো
ওর দাদু নাকি শাড়ি কিনে রেখেছে।
হ্যাঁ গো, তুমি তো শাড়ি পড়তে বলেছিলে কাল
দাঁড়াও এক্ষুনি পড়ে আসছি
মধ্যরাতে ওর মাথায় কি চেপেছিল জানিনা
লালপাড় সাদা শাড়ি কপালে ছোট্ট টিপ
ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে পরী হয়ে সামনে এলো
সকালে ভেজা চুলের
এক ফোঁটা পানি পড়লো গালে
এই যে মশায় উঠেন
আপনার জন্য পায়েস রেডি।

বউটা বারবার কবরের পাশে শুয়ে কাঁদছে
কেউ যেন সরাতে পারছেনা তাঁকে
কে জানতো তাঁর শাড়ির লাল রংটা ধুয়ে যাবে
মেয়ে জেগে বাবাকে আর জীবিত দেখবেনা
বাবা মা ভাই বোন সবাই
লাশের গাড়ির অপেক্ষায় থাকবে।

বউটা এক বছর পর কবরে এসে বললো
কয়েকদিন হলো তুমি স্বপ্নে আসো বারবার
আমাদের একটা ছেলেও হয়েছে
কিন্তু সে পারলোনা তোমায় দেখতে
জানো? তোমার মেয়েটা বড় হয়েছে কত
চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে
মা, তুমি তো বলো বাবা দূর আকাশে
তারা হয়ে দেখছে আমাদের
কাঁদলে কষ্ট পাবে সে।

কবর থেকে যদি বলতে পারতাম
কফিনে শেষ পেরেকটা মেরে দিয়েছো
আমি শুনতে পাইনা তোমাদের চিৎকার।

আরও পডুন: ‘হ্যাঁ, আমি বিবাহিত’ : দিঘী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *