বরিশাল প্রতিনিধিঃ শনিবার (২৫ জুন) সকালে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন রোববার সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। এদিন সকাল থেকেই বরিশালে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা যায়। আর তার ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় লঞ্চঘাটে। রোববার রাতে বরিশাল নৌ-বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনে যাত্রীদের চিরচেনা সেই ভিড় আর নেই।

ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তদবির ছাড়া এই রুটে চলাচলকারী লঞ্চের কেবিন কিংবা সোফা মেলে না। এমনকি ডেকের জন্যও আসন রাখতে হতো বিকেলে। কিন্তু রোববার বরিশাল নৌ বন্দরের চিত্র ছিল তার উল্টো।

রোববার বরিশাল নৌ বন্দরে নোঙর করে থাকা ৬টি বিলাসবহুল লঞ্চের সামনে যাত্রীদের যাত্রীদের কোনো ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। বরং যাত্রী পেতে হাক-ডাক দিতে দেখা গেছে লঞ্চের কর্মীদের। এসময় তারা উচ্চ শব্দে কেবিন ও সোফা বিক্রির জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন।

বরিশাল নদী বন্দর সূত্রে জানা গেছে, রোববার ঢাকার উদ্দেশ্যে ৬টি লঞ্চ বরিশাল ছেড়েছে। লঞ্চগুলো হলো- এমভি এ্যাডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ১১, সুরভী ৭, পারাবত ১২ ও পারাবত ৯।

একাধিক লঞ্চে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ২৫০ টি কেবিনের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭৮ টি, এমভি এ্যাডভেঞ্চার ১ লঞ্চের ১৬৫টি কেবিনের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭৫টি, এমভি পারাবত ১২ লঞ্চের ২৪০টি কেবিনের মধ্যে ১২০টি বিক্রি হয়েছে এবং এমভি সুন্দরবন ১১ লঞ্চে ২৪০টি কেবিনের মধ্যে ২১৫টি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে সুরভী ৭ ও পারাবত ৯ লঞ্চের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কেবিন খালি রয়েছে। ডেকও অর্ধেক আসন খালি। সাধারণত এই মৌসুমে খুব বেশি যাত্রী হয় না। তবে আজ যাত্রী খুবই কম।

কুয়াকাটা ২ লঞ্চের যাত্রী মীর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঢাকায় ব্যবসার কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে দশ বছর ধরে যাতায়াত করি। আজ এসে মনে হলো যাত্রীদের বেশ কদর করছে লঞ্চ স্টাফরা। পন্টুন ঘুরে শুনলাম সব লঞ্চই কেবিনের যাত্রী খুঁজচ্ছে। এমন যাত্রী আকাল আগে দেখিনি।

সুন্দরবন ১১ লঞ্চের যাত্রী কবির হোসেন বলেন, আজকে যাত্রী অনেক কম। পুরো ডেক ভরেনি৷ আমরা তিনজন ঢাকা যাচ্ছি। কেবিনেও তারা ভাড়া কমিয়েছে।

পারাবত ৯ লঞ্চের যাত্রী মাইনুল হাওলাদার বলেন, আগে ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকার কমে বিক্রি করতো না। আজকে ১৮০০ টাকায় নিলাম। সিঙ্গেল কেবিন আগে ১৪০০ টাকা থাকলেও আজ এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখলাম।এমভি সুন্দরবন ১১ লঞ্চের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, লঞ্চে চলাচলকারীদের অধিকাংশ ডেকের যাত্রী। এই যাত্রী কখনোই বাসে যাবে না। আমাদের চিন্তার কোন কারন নেই।

তিনি বলেন, যাত্রী কমবে কিনা তা সামনের ঈদের সময় বোঝা যাবে। সাধারণত এই সময়ে যাত্রী কিছুটা কম থাকে। যারা বলছে যাত্রী কমেছে তারা ভুল বলছেন।এমভি কুয়াকাটা ২ লঞ্চের কাউন্টার ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, এই সময়ে ডেকের যাত্রী সংখ্যা কম থাকে। তবে এটি সত্য যে, অধিকাংশ লঞ্চে কেবিনের যাত্রী অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ‘র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লঞ্চে কিছু যাত্রী কমেছে। তবে বেশি কমেছে কেবিনের যাত্রী। কেবিনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। তবে যাত্রী ধরে রাখতে মালিকরা ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *