অনলাইন ডেস্ক : বগুড়া সদর উপজেলার ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার যুবক নুর আমিন জিয়াম। শখের বশে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় পালন করেছেন। কুচকুচে কালো ও সাদা রঙের ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘হিরো আলম’। ৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৯০০ কেজি (২২ মণ)। সাড়ে তিন বছর বয়সী ‘হিরো আলম’র দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ লাখ টাকা।
এরই মধ্যে ষাঁড়টি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন দেখতে আসছে। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুর আমিন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ষাঁড়টি বিক্রি করবেন।
হিরো আলমকে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে দিনে দুবার গোসল করানো হয়। এছাড়া পরিষ্কার ঘরে রাখা, রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়াসহ সবই করা হয় চিকিৎসকের পরামর্শ মতো।
এবারের কোরবানি ঈদে হিরো আলমকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন হিরো আলমের মালিক। তবে ৮ লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন।
তবে এবার ঈদে হিরো আলম ছাড়াও টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মীর হামজানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক হাশেম আলী আকন্দের ছেলে আল আমীন । তিনি এবার ঈদে ছয়টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে একটির ওজন ৩২ মণ। নাম রেখেছেন ‘মেসি’। আশা করছেন ১০ লাখ টাকায় এটি বিক্রি করতে পারবেন।
আল আমিন জানান, ২০০৬ সালে গ্রামের পাশে সল্লা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন এলেঙ্গা শামছুল হক কলেজে। ওই কলেজ থেকেই ২০১৩ সালে স্নাতক (বিএসএস) পাস করেন। পরে চাকরির চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় তাঁর বাবা তাঁকে পরামর্শ দেন গরুর খামার করার। ২০১৪ সালে নিজ বাড়িতে তিনি শুরু করেন গরুর খামার। আট বছর পর এখন তাঁর খামারে ১৫টি ষাঁড় ও ২০টি গাভি রয়েছে। গাভিগুলোর মধ্যে সাতটি দুধ দেয়। প্রতিদিন ৫০–৬০ লিটার দুধ বিক্রি করেন।
ঈদের সময় বিক্রি করেন ষাঁড়। গত বছর কোরবানির ঈদে পাঁচটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন আট লাখ টাকায়। গত রোজার ঈদে দুটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন আড়াই লাখ টাকায়।
এবার কোরবানির ঈদে তাঁর খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৩২ মণ ওজনের ষাঁড়। ওই ষাঁড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেসি’। তিন বছর ধরে এটি লালন–পালন করছেন। অনলাইনে মেসির বিজ্ঞাপন দেখে অনেক ক্রেতাই আসছেন তাঁর কাছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এই পাঁচটি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা পাবেন বলে আশা করছেন। তাতে খরচ বাদে তাঁর ১০–১২ লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছেন।
গত মঙ্গলবার মীর হামজানি গ্রামে আল আমিনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, লম্বা টিনশেড খামারের এক পাশে ১৫টি ষাঁড়, অন্য পাশে ২০টি গাভী। খামারের পাশেই দুই একর জায়গাজুড়ে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়েছে। পাশেই খড়ের গাদা।
আল আমিন আরও জানান, ঘাস, খড়, ভুষিসহ সব ধরনের দেশীয় খাবার তাঁর খামারের গরুগুলোকে খাওয়ান। নিয়মিত ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। তিনজন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছেন ওই খামারে। সরেজমিন পরিদর্শনকালেই মোটরসাইকেলে করে ওই খামারে আসেন দুজন ক্রেতা। সরোয়ার হোসেন নামের একজন জানান, অনলাইনে গরুর খোঁজ পেয়ে এসেছেন। পছন্দ হলে ঈদে এখান থেকেই গরু নেবেন।
আল আমিন আকন্দ জানান, ‘গরুর খামার করে অনেক ভালো আছি। চাকরি করলে এত আয় করা যেত না। অযথা চাকরির পেছনে না ঘুরে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণসুবিধা পেলে বেকার যুবকেরা সহজেই উদ্যোগ নিতে পারবেন।’
স্থানীয় সল্লা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, আল আমিন সফল খামারি। তাঁর সাফল্য দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে গরুর খামার করেছেন। চাকরির পিছে না ছুটে, বিদেশ না গিয়েও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় আল আমিন তার উদাহরণ।