অনলাইন ডেস্কঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের বোঝা বাংলাদেশের। বিপরীতে পাকিস্তানের ঋণের বোঝা বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি। আর সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে দীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের। সদ্য ঋণখেলাপি হওয়া শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ ১০০ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুনঃ শহর ও গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভারসাম্য আসছে :প্রতিমন্ত্রী
লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছেএফটির প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। শ্রীলঙ্কার মতো দেশে যা ঘটছে তার সাথে “বাংলাদেশ কোনভাবেই সংযুক্ত নয়”।তিনি বলেন, ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৯ শতাংশ, যা প্রতিবেশি অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কম। তাই বাংলাদেশ এই মুহুর্তে সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে নেই। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলছে- “বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ঘিরে বিশাল অনিশ্চয়তার” ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির তুলনায় ৩৮.৯১ শতাংশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সর্বনিম্ন ঋণ। জিডিপির তুলনায় বেশি ঋণ রয়েছে মালদ্বীপের। দেশটির জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ ১৪৬.০৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভূটানের ঋণের পরিমাণ ১২০.৭৪ শতাংশ।সদ্য ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম লেখানো শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ ১০১.২৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার পরের অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও ভারত। দেশ দুটির ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৮৭.৫৬ এবং ৫৫.৩৪ শতাংশ। আর এক দেশ নেপালের জিডিপির তুলনায় ঋণ রয়েছে ৪২.১৬ শতাংশ।
গত দুই দশকের মধ্যে চলতি বছরের মে মাসে এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর মধ্যে ঋণ খেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায় রাজাপাকসের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে কলম্বোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর ফলে জুলাই মাসে সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন তিনি। অপরদিকে পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত করার পর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। ফলে খেলাপি এড়াতে আইএমএফ এবং দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থায়ন বন্ধ করতে হচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিকের ছোট দেশ নেপাল এবং মালদ্বীপও বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি বাণিজ্যে সফলতার কারণে সাম্প্রমিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়েও নিরাপদে ছিল বাংলাদেশ। তবে সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের আবেদন করে। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদাতাদের কাছ থেকে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হয়।
ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার অফিসের সময় কমিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। একই সঙ্গে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ।মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, কয়লা এবং ভোজ্যতেলসহ খাদ্যসামগ্রীর আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। জ্বালানি আমদানি কঠিন হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়।