অনলাইন ডেস্কঃ ব্রুনাই সুলতানের ঢাকা সফরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। এ সমঝোতার আওতায় বছরে ১২ কার্গো এলএনজি দিতে আগ্রহী দেশটি।আরও পড়ুনঃ ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আপিল শুনানি ৩ জানুয়ারি

রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গত শনিবার দুপুরে সুলতান ঢাকা এসেছিলেন। রোববার দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রুনাই বাংলাদেশকে কী পরিমাণ এলএনজি দেবে- জানতে চাইলে গতকাল মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাই আমাদের যথেষ্ট এলএনজি দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। এটা খুব ভালো খবর। আমরা যা যা চেয়েছি, মোটামুটি সব দিতে রাজি হয়েছে তারা। কী পরিমাণ এলএনজি দেবে, তা নিয়ে কাজ করবে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সমকালকে বলেন, ব্রুনাইয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশ্বে চাহিদা বাড়ায় চীন, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলো অগ্রিম এলএনজি কিনে রাখছে। ব্রুনাইয়ের এলএনজিও আগামী দু-তিন বছরের জন্য বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রুনাইয়ের সুলতানের সুসম্পর্কের কারণে দেশটি বছরে আপাতত ১২ কার্গো এলএনজি বাংলাদেশকে দেবে। তবে দাম ও অন্যান্য শর্ত আগামীতে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, এক কার্গোতে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা যায়। ফলে ব্রুনাই থেকে মাসে একটি করে কার্গো এলে দৈনিক ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। বর্তমানে কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া খোলাবাজার থেকেও সরাসরি এলএনজি সংগ্রহ করা হয়। তবে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই থেকে খোলাবাজার থেকে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এতে দৈনিক গ্যাসের সরবরাহও কমে গেছে। আগে যেখানে এলএনজি থেকে দিনে ৮০-৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, এখন তা কমে প্রায় ৩৮ কোটি ঘনফুটে নেমেছে। ব্রুনাইয়ের এলএনজি এলে বাংলাদেশ খোলাবাজার থেকে যে গ্যাস সংগ্রহ করত, তার ঘাটতি পূরণ হবে।

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা খাতে পেশাজীবী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ব্রুনাই। এ খাতে আলাদা করে আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী দেশটি। এ ছাড়া ব্রুনাইয়ের সুলতানের ঢাকা সফরে সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাকি সমঝোতাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিয়োগ এবং দুই দেশের

নাবিকদের সনদ স্বীকৃতি। এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ব্রুনাইয়ের অর্থমন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ।

সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব জ্বালানি সংকটে পড়েছে। তার ফলে বাংলাদেশে এক ধাক্কায় জ্বালানির দাম গড়ে ৪৭ শতাংশ বেড়ে যায়। প্রথাগত বাজারের বাইরে ভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যে আগ্রহ দেখিয়েছিল ব্রুনাই। তারই অংশ হিসেবে জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে এ সমঝোতা সই করে দুই দেশ। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে জ্বালানি নিয়ে সহযোগিতাবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল দুই দেশ।

সেই সমঝোতা ২০২১ সালের এপ্রিলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। এখন সেটি আবারও নবায়ন করা হয়েছে।