আশিকুর রহমান : “হৃদয়ে বাংলাদেশ”, উত্তর আমেরিকা ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান । উত্তর আমেরিকায় পড়তে আসা কয়েকজন সমমানের বন্ধুরা বাংলাদেশের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়তে না পাড়া বা সুবিধা-বঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য একটা বৃত্তির ব্যবস্থার জন্য এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
২০০৬-সালে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়, এবং পরের বছর ক্যালিফোর্নিয়ায় রেজিস্ট্রেশন করা হয় । পরে, আয়কর প্রতিষ্ঠান থেকে কর মওকুফের জন্য আবেদন করে সব অনুদানের উপর কর মওকুফ গৃহীত হয় ।
হৃদয়ে বাংলাদেশ দেশের সমস্ত অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক বা স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করে থাকে । প্রতি বছর প্রায় ২০০-জনের মতো ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করা হয় । পাশাপাশি, এখন একটা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও ঢাকার মিরপুর দুয়ারীপাড়ায় একটা বস্তির স্কুলে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে ।
হৃদয়ে বাংলাদেশের সব সদস্যরাই সেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে । আমাদের আর্থিক সংগ্রহ, দেশে টাকা পাঠানো, সব শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা পৌঁছানোতে আমরা সর্বোত্তম চেষ্টা করি যেন, খুব কম খরচে টাকাটা দেওয়া যায়, আর সব থেকে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী সুবিধা পেতে পারে ।
সারা দেশ জুড়ে হৃদয়ে বাংলাদেশের অনেক স্থানীয় সেচ্ছাসেবক রয়েছে । তারা নিজ নিজ এলাকায় আর্থিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজে ঢাকার সেচ্ছাসেবক দলের কাছে পাঠায় । পরে, ঢাকা ও আমেরিকার কর্মীকে মিলে কোনো নির্দিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীকে বৃত্তি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে । এরপর, সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে বৃত্তির জন্য চূড়ান্ত করা হয়, এবং মাসে মাসে নির্ধারিত হারে বৃত্তির টাকা পৌঁছানো হয় । প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্মীরা সময় সময়ে বৃত্তিধারী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার খবর সংগ্রহ করে পাঠায় । আবার, মাঝে মাঝে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তাদের স্কুল-কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল চাওয়া হয় । এইসব ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তাদের বৃত্তি বহাল থাকে অথবা অনেক সময় বন্ধ করা হয় । প্রতিষ্ঠানের সার্বিক লক্ষ্য থাকে যেন এই প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো পড়াশুনা করে, ভালো ফল করে তাদের জীবনে একটা সুন্দর স্থানে পৌঁছাতে পারে । শুধুমাত্র টাকার অভাবে তাদের জীবনের পড়া-লেখাটা যেন থেমে না যায় ।
হৃদয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য সব সময় সুবিধা বঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া-লেখার পথ যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করা । সময়ের পরিক্রমায় এখন অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা সরাসরি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারে । তখন, আমাদের কর্মীরা আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীকে ফোনে বা দেখা করে একটা সাক্ষাৎকার নেয়, সাথে তার রেফারেল ব্যাক্তি-বর্গের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করা হয় ।
হৃদয়ে বাংলাদেশের এই পথ-চলা সম্ভব হয়েছে আমাদের অগণিত দাতাদের জন্য। পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব সহকর্মী, অনেক জানা-অজানা অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছেন অনেক ছাত্র-ছাত্রীর বৃত্তির জন্য অর্থ দিয়েছেন । সেই অর্থেই আমাদের সংস্থা সামনে এগিয়ে আজ এখানে এসে পৌঁছেছে । আমাদের সংস্থার বৃত্তি নিয়ে কেউ ডাক্তার হয়েছে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে, কেউবা কলেজের শিক্ষক । বর্তমানে আমাদের ২০০-এর বেশি নিয়মিত দাতা আছে, আবার অনেকেই এককালীন একটা অর্থ সাহায্য করে থাকেন । অনেকেই আবার একজন নির্দিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীকে দু-চার বছরের বৃত্তির জন্য মাসিক হারে অর্থ সাহায্য করে থাকেন ।
হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্নকে বাস্তবে পৌঁছে দিতে তার পাশে দাঁড়ানো । একটা অপরিণত ছেলেকে যেন সময়ের আগেই অর্থাভাবে কর্মক্ষেত্রে না যেতে হয়, বা একটা মেয়েকে বিয়ের পিঁড়িতে না বসতে হয়, “হৃদয়ে বাংলদেশ” তাদেরকে তাদের চলার পথের সঙ্গী হয়। তাদের ভাগ্য নিজেরদেরই গড়ে নিতে হবে, শুধু হৃদয়ে বাংলাদেশ তাদেরকে হার না মানতে অনুপ্রেরণা যোগায়, তাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে স্বপ্ন দেখায় । আপনারাও আমাদের পাশে থেকে দেশের এই রকম শতশত ছেলে-মেয়েকে একটু সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেন, এই প্রত্যাশা ।
আমাদের ওয়েবসাইট: www.hridoyabangladesh.org
আমাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা: info@hridoyabangladesh.org