ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে ক্রিকেট বিপ্লব

স্পোর্টস ডেস্কঃ দক্ষিণ পূর্ব ব্রাজিলে মিনাস গেরাইস রাজ্যের ছোট্ট শহর পোকোস দে কালদাস। তারই এক কোণে চলছে লুইজ রবার্তো ফ্রান্সিসকোর ধ্যানযজ্ঞ। না, কোনো যোগাসনে নয়, ফ্রান্সিসকোর ধ্যানটা ক্রিকেট নিয়ে, ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে। পেলে, ‘বড়’ রোনালদো, নেইমারদের ফুটবলের দেশে রীতিমতো ক্রিকেটীয় বিপ্লব আনার পথটাই খুলে বসেছেন তিনি। রয়্যাল ওয়ার্কশপ নামে খুলেছেন ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা। যার ফলে এবার ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হবে সাম্বা ফুটবলের দেশে।

পাঁচ বারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের দেশে এই কয়েক দশক আগেও ক্রিকেটের তেমন কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। ক্রিকেটের সেই মরুভূমিতেই ফুল ফুটিয়েছেন ম্যাট ফেদারস্টোন। ব্রাজিলে ক্রিকেট বিপ্লবের সদর দপ্তরটা এই ১ লাখ ৭০ হাজার জনসংখ্যার শহর পোকোস দে কালদাসেই। সেখানেই ক্রিকেট ব্যাটের কারখানা খুলে বসেছেন লুইজ রবার্তো।

৫১ বছর বয়সী ফেদারস্টোন অবসরের পর ২০০০ সাল থেকে ব্রাজিলিয়ান স্ত্রী নিয়ে আছেন লাতিন আমেরিকায়। সাম্বা ফুটবলের দেশে তিনি ও তার ১৯ সহযোগীই মূলত দেশটিতে ক্রিকেটের প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন।

কাজও হচ্ছে বেশ। তাদের ৬৩টি কমিউনিটি ইয়ুথ প্রোগ্রামের কারণে ব্রাজিলে এখন ৫০০০ এরও বেশি পেশাদার ক্রিকেটারের বসবাস। দেশটির জাতীয় নারী ক্রিকেট দল শেষ পাঁচটি দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যে জিতেছে পাঁচটিতেই।

তবে করোনা মহামারি তাতে বাধ সাধে। ক্রিকেটের জন্য মূল যে সরঞ্জাম সেই ব্যাট আমদানি করতে হতো, দেশটিতে কোনো ক্রিকেট ব্যাট প্রস্তুতকারক ছিলেন না যে! করোনা মহামারিতে সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেলে আটকে যায় দেশটিতে ব্যাটের সরবরাহও ।

তখনই ফেদারস্টোন খোঁজ পান ফ্রান্সিসকোর। অবসরপ্রাপ্ত এই ইলেক্ট্রিশিয়ান পোকোস দে কালদাসে পরিচিত সকল কাজের কাজি হিসেবে। তাকেই ডেকে পাঠান ব্রাজিল ক্রিকেট কর্তা। জিজ্ঞেস করেছিলেন, ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করতে পারে, এমন কাউকে দরকার তার। ফ্রান্সিসকোকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মেনে নিয়েই শুরু তার।

তবে কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। জীবনে কখনো ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি, তার কাঁধেই কি-না পড়ল ব্যাট বানানোর দায়িত্ব! তার সঙ্গে যোগ করুন ব্রাজিলে ব্যাট তৈরির যন্ত্রেরও অভাবকে। সব মিলিয়ে কাজটা কঠিন হচ্ছিল ক্রমেই।

এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্সিসকোর ত্রাতা হয়ে এলো ইউটিউব। নিজে প্রথমে বানালেন ব্যাট তৈরির যন্ত্র। এরপর মন দিলেন আসল কাজ, ব্যাট তৈরিতে। শুরুতে জানতেন না কোন কাঠের ব্যবহার চলবে তাতে। অনেক রকমের কাঠ ব্যবহার করলেন। অনেক মাসের ট্রায়াল অ্যান্ড ইরোরের পর তিনি ও ব্রাজিল ক্রিকেট থিতু হলো পাইন কাঠে। শেষমেশ নিজ ঘরের উডওয়ার্কিং ওয়ার্কশপটাকে রূপ দিলেন ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানায়।

এখন পাঁচ ঘণ্টা শ্রমে তিনি বানিয়ে ফেলতে পারেন আস্ত এক ক্রিকেট ব্যাট। প্রতিটির দাম পড়ে ১০০ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় ২০০০ টাকার কাছাকাছি। বাইরে থেকে শীর্ষমানের ক্রিকেট ব্যাট আনলে খরচটা বেড়ে যেত ৭০ গুন, ফ্রান্সিসকোর কল্যাণে সেটাও এক ঝটকায় কমিয়ে ফেলেছে ব্রাজিল ক্রিকেট।

ব্রাজিলে ক্রিকেটের প্রসারটা ক্রমেই বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে তাই ব্যবসাটাও বাড়াচ্ছেন ফ্রান্সিসকো। এখন স্টাম্প আর ফোল্ডেবল ক্রিকেট চেয়ারও বানাচ্ছেন তিনি। ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে যে হারে ছড়াচ্ছে ক্রিকেট, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে যে ব্যবসাটা আরও বাড়াতে হবে ফ্রান্সিসকোকে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *