কোন এক আশ্চর্য কারনে তার নামও ফাতিমা। পুরো নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। তিনি সন্তান সম্ভাবা। আজকাল শরীরটা তার ভাল যাচ্ছেনা। ঘর থেকে বের হয়ে হাটতে হাটতে কা’বা ঘরের সামনে গেলেন। প্রশান্তি পাওয়ার জন্যে কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে লাগলেন। হঠাৎ করে তার পেটের ব্যাথা প্রচন্ড আকার ধারন করলো।

তিনি কা’বার দেয়াল ধরে নিজেকে কোন রকম রক্ষা করলেন। লেবার পেইন শুরু হয়েছে। দ্রুত ঘরে যাওয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে যাবেন। ব্যাথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ার মত অবস্থা। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেনঃ “হে রক্ষক আমার যন্ত্রনা কমিয়ে দিন”। ব্যাথা কমলো না, বরং প্রচন্ড রকম বাড়তে লাগলো। এরপর উপায়ন্তর না দেখে তিনি কা’বা ঘরের দরজায় ধাক্কা দিলেন। দরজা খুলে গেলো। ফাতিমা প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে কা’বা ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। প্রবেশের সাথে সাথে দরজা আপনা ইচ্ছাতেই বন্ধ হয়ে গেলো। কা’বা ঘরের ভেতরে তিনি সন্তান প্রসব করলেন। আবির্ভাব ঘটলো কা’বা ঘরে জন্ম নেয়া এ পৃথিবীর সর্বপ্রথম শিশুর। আর এটিই শেষ কেননা কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন শিশুর জন্ম অন্তত কা’বা ঘরের ভিতরে হবেনা।
তিনদিন কা’বা ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। ফাতিমা শত চেষ্টা করেও এই তিনদিনে সদ্যোজাত সন্তানকে এক ফোটা বুকের দুধ খাওয়াতে পারেনি। শুধু তাইনা, সন্তান একটি বারের জন্যে চোখ মেলেও তার দিকে তাকায়নি। ফাতিমা তিনদিন সন্তানকে কোলে নিয়ে দিন রাত্রি কান্না করলেন। আর ভাবলেন এই অন্ধ সন্তানকে কিভাবে তার স্বামীর কোলে তুলে দিবেন। এমনিতেই মক্কার লোকদের কটু কথার শেষ নেই। এই লাঞ্চনা তিনি কিভাবে সহ্য করবেন।
তিনদিন পর কা’বা ঘরের দরজা আপনা আপনি খুলে গেলো। মলিন মুখে সন্তানকে কোলে নিয়ে ফাতিমা কা’বা ঘরের দরজা দিয়ে বের হলেন। পুরো মক্কাবাসী কা’বা ঘর ঘীড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার দৃষ্টি ফাতিমার কোলের সদ্যোজাত সন্তানের দিকে।
ফাতিমা লক্ষ্য করলেন কা’বা ঘরের ঠিক দরজার সামনে একজন দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছেন আর শিশুর দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি শিশুটিকে কোলে নেয়ার জন্যে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি সম্পর্কে শিশুটির চাচাতো ভাই হোন। এই মহাবিশ্বের সকল মানবজাতির যিনি হেদায়েতের কান্ডারী। সকল নবী রাসুলগন যার দীদার লাভের আশায় দিন রাত্রি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ পেশ করেন। আসমান জমীনের মাঝে সকল সৃষ্টির মূল যিনি, যিনি সৃষ্টি না হলে আসমান জমীন কিছুই সৃষ্টি হতোনা। আর তিনিই কিনা সয়ং দাঁড়িয়ে আছেন সদ্যোজাত এই শিশুটিকে স্বাগত জানানোর জন্যে।
ফাতিমা কান্নার সুরে বললেন, ওকে কোলে নিয়ে কি করবে, ও তো চোখে দেখেনা…
সারোয়ারে কাওনাইন, দোজাহানের সরদার, আহমদে মোস্তফা, মুহাম্মাদে মোস্তফা রাসুলে আকরাম (সাঃ) হাত আরো প্রশস্ত করে বললেন, চাচীজান, ও আমার, ও আমার ভাই। ওকে আমার কোলে দিন।
ফাতিমা এগিয়ে এসে শিশুটিকে হুজুর পাক (সাঃ) এর কোলে দিলেন। শিশুটি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালেন। ফাতিমা আশ্চার্যান্বিত হলেন। যেই শিশু টানা তিন দিন কা’বা ঘরের ভেতরে থেকেও চোখ মেলে একবারের জন্যে তাকালো না, সে কিনা আখেরী নবীর (সাঃ) স্পর্শ পেয়ে সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।
হুজুর নুরনবী (সাঃ) শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে টের পেলেন শিশুটি খুব খুধার্ত। তিনি সাথে সাথে তার মুখের লালা মোবারক শিশুটির মুখে দিলেন।পৃথিবীতে এমন আশ্চর্য ঘটনা এর আগে এবং পরে আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। যে, কারো জন্ম পবিত্র কা’বা ঘরে ভেতরে হয়েছে। আর সে কিনা সর্বপ্রথম নিজের চোখ দিয়ে আল্লাহর হাবিবের(সাঃ) পবিত্র চেহারা মোবারক দেখেছেন। শুধু তাইনা এ নশ্বর পৃথিবীতে যার প্রথম খাবার ছিল আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) লোয়াবে দোহান মানে পবিত্র লালা মোবারক। শুধু তাইনা সে ছিল ইসলাম গ্রহনকারী শিশু এবং পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলমান।
এখানেই আল্লাহ শেষ করেননি। তাকেই আবার বানিয়েছেন এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী ও জান্নাতী নারীদের সর্দারনী মা ফাতেমার স্বামী। এবং তিনি এমন দুই সন্তানের পিতা যাদের ত্যাগের বিনিমিয়ে আজও ইসলাম জিন্দা রয়েছে। ইমাম হাসান-হোসাইনের পিতা তিনি। যার পুরো পরিবার কারবালায় রক্ত দিয়ে ইসলাম দ্বীনকে নিয়ে গিয়েছে সুউচ্চ স্থানে। তিনিই হলেন শেরে খোদা মওলা আলী মোর্তজা (রাঃ)।
ছবিঃ ইরানী চলচ্চিত্র হতে সংগৃহীত