অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ এখন কঠিন নেতৃত্ব সংকটে রয়েছে। গত বছর জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে দলের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দলের হাল ধরে রেখেছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারানোর পর দলের ভেতরে কে হাল ধরবেন, সেই ‘সাকসেশন প্ল্যান’ বা উত্তরাধিকার–প্রশ্নে তিনি এতদিন চুপ ছিলেন। ফলে দলটি নেতৃত্বশূন্যতার বড় সংকটে পড়ে।

বর্তমানে বয়স ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকারী পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন বলে দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় রয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। কংগ্রেসে রাহুল–প্রিয়াঙ্কা মডেলে যেভাবে নেতৃত্ব গড়ে তোলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগেও প্রায় একই রকম মডেল প্রয়োগ করছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয়: মার্কিন নাগরিক হলেও দলের প্রধান মুখ হিসেবে মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সক্রিয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ছুটি নিয়ে পূর্ণসময়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। মায়ের কাছাকাছি থাকায় দল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক: তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে ধীরে ধীরে তাকে সামনে আনা হচ্ছে।

ভারতের কংগ্রেসে সোনিয়া গান্ধী ধীরে ধীরে আড়ালে চলে গেলে তার সন্তান রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা নেতৃত্বে আসেন। রাহুল সামনে থাকলেও প্রিয়াঙ্কা সহযোগীর ভূমিকায়। শেখ হাসিনা একইভাবে জয়কে মুখ্য ভূমিকায় রেখে, পুতুল ও রাদওয়ানকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনার কৌশল নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতৃত্ব কাঠামোয় ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছেন। ভারতে গিয়েও তিনি দীর্ঘদিন দলীয় সভাপতির সাক্ষাৎ পাননি। বরং শেখ হাসিনা ভরসা রাখছেন কলকাতায় অবস্থানরত তিন নেতার ওপর—

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল,সাবেক এমপি আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম,জাহাঙ্গীর কবির নানক। সরাসরি বা অনলাইনে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে যুক্ত।

যদিও দলের ভেতরে প্রকাশ্যে কেউ এই ‘সাকসেশন প্ল্যান’ নিয়ে কথা বলতে চান না। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত বলেছেন—“এখন আমাদের অগ্রাধিকার হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। কে কোন পদে থাকলেন, সেটা এখন ভাবার সময় নয়।”

তবু দলীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সায়মা ওয়াজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং জয়–রাদওয়ানকে সামনে আনা–এগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ধীরে ধীরে পরিবারকেন্দ্রিকভাবে সাজানো হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা