চার লাখ টন গম নিয়ে সীমান্তে কয়েক শ ট্রাক
ভারত থেকে প্রায় চার লাখ টন গম নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় সীমান্তে তিন সপ্তাহ ধরে আটকে আছে শত শত ট্রাক। অভিযোগ, ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না। কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে এমন একটি প্রতিবেদন উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা নেই, কাগজপত্রও সব ঠিক, তবু গম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না শত শত ভারতীয় ট্রাক। বৃষ্টির কারণে গমগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। সেটি হলে কোটি কোটি রুপি লোকসান গুনতে হবে তাঁদের। গত ১৩ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে গম রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। তবে ১৩ মের আগে গমের জন্য যেসব ঋণপপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোর চালান পাঠানো যাবে বলে জানানো হয়।

পশ্চিমবঙ্গ রপ্তানিকারক সমন্বয় কমিটির (ডাব্লিউবিইসিসি) সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেছেন, ‘(মালদা জেলার) মাহাদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন গম আটকে রয়েছে। এসব চালানের জন্য আমরা ১৩ মের আগে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি। এসব চালান বহনকারী ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় রপ্তানিকারক বলেন, ডিজিএফটি সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছে, যেসব গমের চালানে ১৩ মের আগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর কোনো বিধি-নিষেধ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, গমের চালানগুলো যেন রপ্তানি করা যায়, যেগুলোর সব আনুষ্ঠানিকতা নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ হয়েছে, এমন একটি আদেশ দেয় ডিজিএফটি।

এ বিষয়ে জানতে এক কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল দ্য টেলিগ্রাফ। তিনি বলেছেন, ‘ডিজিএফটি থেকে আমাদের একটি নির্দেশনা দরকার। তা না হলে ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ’

একই অবস্থা কুচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও। চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিমল কুমার ঘোষ জানান, গত ১২ মে থেকে সীমান্তে গমবোঝাই প্রায় দেড় হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাওনা সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ঋণপত্রগুলো ইস্যু করা হয়েছিল বাংলাদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পরিস্থিতিটি বিবেচনা করা। বিধি-নিষেধ আরোপের আগে রপ্তানির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ’

চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ অঞ্চলে এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই বস্তাগুলো ট্রাকে থাকলে গম পচে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে বস্তায় পানি ঢুকে গমের ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেলে চালানের একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাবে, যা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি। ’

মালদার এক রপ্তানিকারক বলেছেন, গত ১৩ মে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় চার লাখ টন গম আটকে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। কারণ বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য অন্য দেশ থেকে কেনার পরিবর্তে ভারতীয় গম কেনা প্রায় ৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে ভারত। ’

হিলিতে প্রবেশ করল ১১ গমবোঝাই ট্রাক

এদিকে হিলি প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে গম আমদানি। ওপারে পাইপলাইনে এখনো বিপুলসংখ্যক গমবোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে দেশটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। গত বুধবার বিকেলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ৪২৯ মেট্রিক টন গম আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম সুইট।

তিনি বলেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৩ মে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে বন্দর দিয়ে গম আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আগের টেন্ডার হওয়া গম রপ্তানির সিদ্ধান্ত হওয়ায় গত ২৯ মে ভারত থেকে দুটি ট্রাকে ৭৮ টন গম আমদানি করা হয়েছে। এরপর আবারও আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দফা বন্ধ ও চালুর মধ্য দিয়ে ফের শুরু হয়েছে আগের টেন্ডারের গম রপ্তানি। এখনো বেশসংখ্যক গমবোঝাই ট্রাক আটকে পড়েছে ওপারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *