কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তার মা তাহমিনা বেগমের (৫২) নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে কবিরাজ মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ও বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজি করতেন।
পুলিশ জানায়, জিন তাড়ানোর নামে বাড়িতে ডেকে আনা ওই কবিরাজই মা-মেয়েকে হত্যা করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত সুমাইয়ার মা তাহমিনা বেগম নিয়মিত বাবুস সালাম জামে মসজিদের খতিব ইলিয়াস হুজুরের কাছে ঝাড়ফুঁক করতে যেতেন। এ সময় মসজিদের খাদেম মোবারক হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কবিরাজি করার দাবি করে তিনি তাহমিনার বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন।
গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সুমাইয়া আফরিনের কক্ষে জিন তাড়ানোর জন্য তাকে ডাকেন তাহমিনা বেগম। একপর্যায়ে কবিরাজ মোবারক সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির সময় মা তাহমিনা মেয়ে সুমাইয়াকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে মোবারক প্রথমে তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে সুমাইয়াকেও হত্যা করে তাদের বাসায় থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের একাধিক ইউনিট তদন্ত শুরু করে। পাশের একটি স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মোবারকের গতিবিধি শনাক্ত করা হয়।
পালানোর চেষ্টা করার সময় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মোবারককে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঢাকাগামী ট্রেনে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সোমবার ভোরে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন— তাহমিনা বেগম (৫২), কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী, সুমাইয়া আফরিন (২৩), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী
ঘটনার পর নিহত তাহমিনার বড় ছেলে তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, হত্যাকাণ্ড দুটি একই ব্যক্তি সংঘটিত করেছে। তবে তদন্ত অব্যাহত আছে। যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
এ ঘটনার পর এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ধর্মের নামে প্রতারণা করে ‘কবিরাজি’ বা জিন তাড়ানোর ব্যবসার আড়ালে অপরাধ চলছে। তারা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।