অনলাইন ডেস্কঃ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রবেশদ্বার। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত এ আধুনিক মহাসড়ক প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াতের ভরসা হলেও, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এটি এখন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিন বছরে এ সড়কে ঘটেছে ১ হাজার ৩০৩টি দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৩ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৯৮৬ জন। শুধু চলতি আগস্ট মাসের ২১ তারিখ পর্যন্তই ঘটেছে ১৩টি দুর্ঘটনা, যাতে ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আটজন পুরুষ ও দুজন নারী।
সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ২১ আগস্ট। ভোরে শ্রীনগরের ষোলঘরে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও একজন। একই দিন রাতে সিরাজদীখানের নিমতলায় মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিন মোটরসাইকেল আরোহী, আহত হন আরও একজন।
এর পরদিন শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে হাঁসাড়া যাত্রী ছাউনির কাছে মাওয়া থেকে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেটকারে ওভার হিট হয়ে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভালেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ওভারটেকিং, অনভিজ্ঞ চালক এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। অনেক সময় চালকরা যাত্রীকে বা অচেনা কাউকে গাড়ি চালাতে দেন—যা সরাসরি প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর শুনতে শুনতে মানুষ ভীত হয়ে পড়ছে।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ে উদ্ধার কাজ চালাই। কিন্তু মূল সমস্যা অতিরিক্ত গতি আর অসচেতনতা।”
শ্রীনগরের হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, “নিয়মিত টহল ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও চালকের সচেতনতা ও গতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব নয়।”
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মানের এ মহাসড়ককে নিরাপদ করতে হলে কঠোরভাবে স্পিড লিমিট বাস্তবায়ন, সিসিটিভি নজরদারি, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং যাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
